প্রাণী জগৎ-এর জন্য অশনি সংকেত! নতুন আইনে বিপদ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিপন্ন প্রজাতির সুরক্ষা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছে, যা পরিবেশবিদদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন ‘বিপন্ন প্রজাতি আইন’-এ (Endangered Species Act) পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে, যার ফলে সংকটাপন্ন প্রজাতিগুলোর আবাসস্থল রক্ষার ক্ষেত্রে দুর্বলতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই পরিবর্তনের ফলে বনভূমি ধ্বংস, খনিজ উত্তোলন, এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়তে পারে। মূলত, ‘বিপন্ন প্রজাতি আইন’-এর ‘ক্ষতি’ (Harm) শব্দটির একটি দীর্ঘদিনের সংজ্ঞা রয়েছে, যেখানে প্রজাতিগুলোর বাসস্থান পরিবর্তন বা ধ্বংস করাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পরিবেশবিদদের মতে, আবাসস্থলের এই পরিবর্তনই প্রজাতি বিলুপ্তির প্রধান কারণ। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, আবাসস্থলের পরিবর্তনকে ‘ক্ষতি’ হিসেবে গণ্য করা হবে না, যতক্ষণ না কোনো প্রজাতির ওপর সরাসরি আঘাতের (Take) উদ্দেশ্য থাকে।

এই প্রস্তাবের ফলে উদ্বেগের কারণ হলো, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বিপন্ন প্রজাতির ক্ষতি না করে, তবে তিনি তাদের আবাসস্থল ধ্বংস করতে পারবেন। যেমন, কোনো ব্যক্তি যদি একটি বনে গাছ কাটেন বা সেখানে কোনো স্থাপনা তৈরি করেন, তবে তিনি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তার গাছ কাটার ফলে তিনি কোনো বিপন্ন প্রজাতির ক্ষতি করেননি, তাহলে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না। পরিবেশবিদরা মনে করেন, এই পরিবর্তন ‘বিপন্ন প্রজাতি আইন’-এর মূল উদ্দেশ্যকে দুর্বল করে দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের মৎস্য ও বন্যপ্রাণী দপ্তর (U.S. Fish and Wildlife Service) এবং ন্যাশনাল মেরিন ফিশারিজ সার্ভিস (National Marine Fisheries Service)-এর মতে, আবাসস্থলের পরিবর্তনকে ‘ক্ষতি’ হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়, কারণ এটি সরাসরি প্রজাতিকে আঘাত করার মতো নয়।

তবে, পরিবেশ বিষয়ক আইনজীবীরা বলছেন, ‘ক্ষতি’-র এই সংজ্ঞা সুপ্রিম কোর্টও বহাল রেখেছে। এই প্রস্তাবের ফলে ইতিমধ্যে বিদ্যমান অনেক প্রজাতি, যেমন – স্পটেড পেঁচা (Spotted owls), ফ্লোরিডার প্যান্থার (Florida panthers), বাল্ড ঈগল (Bald eagles), ধূসর নেকড়ে (Gray wolves), ফ্লোরিডার ম্যানাটি (Florida manatees), হাম্পব্যাক তিমি (Humpback whales), এবং সবুজ সমুদ্র কচ্ছপ (Green sea turtles)-এর জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের জন্য এই পরিবর্তন বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় হাওয়াইয়ে সবচেয়ে বেশি বিপন্ন প্রজাতি বাস করে।

হাওয়াইয়ের স্থলভাগের পরিমাণ খুবই কম হলেও, সেখানকার প্রায় ৪০ শতাংশ বিপন্ন প্রজাতি এই দ্বীপগুলোতে বসবাস করে। সেখানকার স্থানীয় জীববৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও এই পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উপকূলের বালুকাময় অঞ্চলে বসবাসকারী ছোট ছোট মৌমাছি, যারা সেখানকার উদ্ভিদের পরাগায়ণে সাহায্য করে, তাদের আবাসস্থলও এই পরিবর্তনের কারণে হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।

এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। তাদের আশঙ্কা, এই পরিবর্তনের ফলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কয়েক দশকের যে অগ্রগতি হয়েছে, তা দুর্বল হয়ে যাবে। পরিবেশবিদদের মতে, আবাসস্থল হলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং আবাসস্থল ধ্বংস হলে প্রজাতিগুলোর পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়, যার ফলস্বরূপ তারা বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *