এন্ডোমেট্রিওসিসের নতুন গবেষণায় খাদ্য ও জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত!

শিরোনাম: খাদ্যতালিকায় পরিবর্তনের মাধ্যমে এন্ডোমেট্রিওসিস-এর যন্ত্রণা কমানো সম্ভব? নতুন গবেষণায় নারীদের জন্য আশা।

বাংলাদেশে অনেক নারীর কাছে এন্ডোমেট্রিওসিস একটি পরিচিত সমস্যা। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে জরায়ুর ভেতরের আস্তরণের মতো কোষ শরীরের অন্যান্য অংশে, যেমন ডিম্বাশয় বা ফেলোপিয়ান টিউবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এর ফলে তলপেটে তীব্র ব্যথা, অনিয়মিত ঋতুস্রাব এবং সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে।

সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন একটি গবেষণা জানাচ্ছে যে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এই রোগের যন্ত্রণা অনেকাংশে কমানো যেতে পারে।

গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গের গবেষকদের দ্বারা। ‘JAMA Network Open’-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় প্রায় ২৬০০ জনের বেশি নারীর খাদ্যাভ্যাস এবং এন্ডোমেট্রিওসিসের উপসর্গের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্য তালিকা থেকে কিছু খাবার বাদ দিলে অনেক নারী তাদের কষ্টের উপশম পেয়েছেন।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা গ্লুটেন (যেমন, গম, বার্লি, রাই) যুক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ ব্যথা কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। একইভাবে, দুগ্ধজাত খাবার (দুধ, পনির, ইত্যাদি) ত্যাগ করা নারীদের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশের ব্যথা কমেছে।

কফি বা ক্যাফিনযুক্ত পানীয় কম গ্রহণ করার ফলে ৪৩ শতাংশ এবং অ্যালকোহল পরিহার করার ফলে ৫৩ শতাংশ নারী তাদের যন্ত্রণায় স্বস্তি পেয়েছেন।

গবেষণার প্রধান লেখক, ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গের অধ্যাপক ফিলিপা সন্ডার্স বলেন, “খাদ্য কিভাবে এন্ডোমেট্রিওসিসের উপসর্গগুলোকে প্রভাবিত করে, তা বুঝতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের জন্য, যদি তারা নিজেদের ভালো রাখতে কিছু করতে পারে, তবে তা তাদের অনেক সাহস যোগায়।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খাদ্যতালিকায় পরিবর্তনের মাধ্যমে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তন ঘটানো যেতে পারে, যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এন্ডোমেট্রিওসিসের ব্যথা কমাতে প্রদাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা প্রক্রিয়াজাত খাবার (যেমন, রেডি-মিল, আইসক্রিম, মিষ্টি) খাওয়া কমিয়েছেন, তাদের প্রায় ৪০ শতাংশের ব্যথা কমেছে। পেঁয়াজ এবং রসুন ত্যাগ করার ফলে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারীর “এন্ডো-বেলি” (পেট ফোলা) সংক্রান্ত সমস্যা কমেছে।

তবে, কোনো বড় ধরনের খাদ্য পরিবর্তন করার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, সবার শারীরিক অবস্থা ভিন্ন হতে পারে।

বাংলাদেশেও এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসার জন্য গাইনিকোলজিস্ট-এর পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো প্রয়োজন।

এন্ডোমেট্রিওসিস একটি জটিল রোগ এবং এর সঠিক কারণ এখনো অজানা। তাই, এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।

এই গবেষণা নারীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।

তথ্যসূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *