এনি আলোকো ও ইয়ান রাইটের বিতর্ক: মাঠের বাইরের লড়াইয়ে উত্তেজনা!

যুক্তরাজ্যে ক্রীড়া অনুষ্ঠানে ধারাভাষ্যকার হিসেবে নারীদের সুযোগ নিয়ে বিতর্ক

সম্প্রতি বিবিসি রেডিও ফোর-এর ‘ওম্যান’স আওয়ার’-এ সাবেক ইংলিশ ফুটবলার এনি আলোকো’র একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নারী ফুটবল নিয়ে ধারাভাষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ইয়ান রাইটের মতো পুরুষ ধারাভাষ্যকারদের সুযোগ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

আলোকো’র মতে, সুযোগ সীমিত, তাই পুরুষদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

আলোকো’র এই মন্তব্যের পর অনেকে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন। অনেকে মনে করছেন, নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের সুযোগ আরও বাড়ানো উচিত।

বিশেষ করে ধারাভাষ্য এবং উপস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নারীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যদিও আলোকো’র এই মন্তব্যের জন্য পরে ক্ষমা চেয়েছেন, তবে ইয়ান রাইট তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আড়ালে চলে গেছে। যেমন, খেলাধুলায় নারী ধারাভাষ্যকার, ভাষ্যকার এবং উপস্থাপকদের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।

বর্তমানে টেলিভিশনে এবং রেডিওতে পুরুষ ও মহিলা উভয় ধরনের খেলার ধারাভাষ্যে নারী উপস্থাপক, ভাষ্যকার এবং বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা একটি ইতিবাচক দিক।

তবে এখনো অনেক কাজ করার আছে। জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের অভাব রয়েছে।

এছাড়া, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরও এই ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নারীদের গুরুত্বপূর্ণ খেলাগুলো সরাসরি সম্প্রচারের সুযোগ দেওয়া উচিত।

যেমন, সম্প্রতি ইংল্যান্ডের পুরুষ দলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুটি ম্যাচে (আলবেনিয়া ও লাটভিয়ার বিপক্ষে) কোনো নারী ধারাভাষ্যকার, ভাষ্যকার বা উপস্থাপক ছিলেন না।

আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণ শুধু সংখ্যা দিয়ে বিচার করা উচিত নয়, বরং তাদের কাজের সুযোগ এবং গুরুত্বের দিকেও নজর দিতে হবে।

খেলাধুলায় বিভিন্ন ধরনের মানুষের অংশগ্রহণ একটি সমৃদ্ধ আলোচনা তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কাতার বিশ্বকাপে অ্যালেক্স স্কট-এর মতো খেলোয়াড়, যিনি একজন সমকামী, খেলার মাঠে ‘ওয়ান লাভ’ রংধনু আর্মব্যান্ড পরেছিলেন এবং এর তাৎপর্য নিয়ে কথা বলেছিলেন, যা দর্শকদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।

তবে সমাজের কিছু মানুষের মধ্যে এখনো পুরোনো ধারণা বিদ্যমান। অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়। এমনকি যারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তাদের কাছ থেকেও এমন মন্তব্য শোনা যায়।

উদাহরণস্বরূপ, সাবেক ধারাভাষ্যকার ডেস লিনাম-এর মতে, ধারাভাষ্যকারদের খেলার মাঠের সঙ্গে পরিচিত হওয়া উচিত।

অন্যদিকে, আমরা দেখছি, বর্তমানে অনেক নারী ক্রীড়া সাংবাদিক ভালো কাজ করছেন এবং তাদের কাজের স্বীকৃতি বাড়ছে।

উদাহরণস্বরূপ, বিবিসি’র উপস্থাপক কেলি কেইটস এবং গ্যাবি লোগান-এর কাজের প্রশংসা করা হচ্ছে। এনি আলোকো এবং লুসি ওয়ার্ড-কে নিয়ে যখন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকে।

এছাড়া, এমা হেইস-এর ধারাভাষ্য এবং ইয়ান রাইটের নারী ফুটবল বিষয়ক কাজও প্রশংসিত হয়েছে।

সব মিলিয়ে খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। তবে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

ক্রীড়া জগতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে এই জগৎ আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *