এলাকার প্রিয় খেলোয়াড় এরিন ফিলিপস কেন ফিরে আসতে চেয়েছিলো?

অস্ট্রেলিয়ার ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, এরিন ফিলিপস। বাস্কেটবল এবং অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল (AFLW) – দুটোতেই তাঁর ছিলো সমান দক্ষতা। সম্প্রতি খেলা থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি, এবং আত্মপ্রকাশ করেছেন নিজের আত্মজীবনী নিয়ে।

তাঁর জীবনের গল্প, যা নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

**একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী**

এরিন ফিলিপস শুধু একজন খেলোয়াড় ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন অনুপ্রেরণা। বাস্কেটবলে তাঁর দক্ষতার প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন – ২০০৮ সালের বেইজিং এবং ২০১৬ সালের রিও ডি জেনেইরোর আসরে।

বাস্কেটবলের পাশাপাশি, তিনি অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবলেও (AFLW) নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। AFLW মূলত অস্ট্রেলিয়ার একটি জনপ্রিয় খেলা, অনেকটা রাগবি বা ফুটবলের মতো, যেখানে ডিম্বাকৃতির বল ব্যবহার করা হয়।

**পুরুষের জগতে নারীর জয়যাত্রা**

ছেলেবেলায় এরিন ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলতেন। কিন্তু একটা সময়ে মেয়ে হওয়ায় তাঁকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। এরপর তিনি বাস্কেটবলের দিকে মনোযোগ দেন এবং সেখানেও সাফল্য লাভ করেন।

তবে তাঁর ভেতরের ফুটবলার সত্তা তাঁকে আবার মাঠে ফিরিয়ে আনে। ২০১৫ সালে AFL যখন মহিলাদের জন্য একটি লীগ চালু করার ঘোষণা করে, তখন এরিন আবার ফুটবলের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই সময়ে তিনি বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে বেশ ভালো অবস্থানে ছিলেন, কিন্তু খেলার প্রতি ভালোবাসাই তাঁকে পুনরায় ফুটবলে ফিরিয়ে আনে।

**আবেগ এবং আত্ম-অনুসন্ধান**

এরিন ফিলিপসের আত্মজীবনী ‘ইনসাইড অ্যান্ড আউট’-এ তাঁর জীবনের নানা দিক উন্মোচিত হয়েছে। খেলার মাঠের কঠিন সংগ্রামের পাশাপাশি, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের গল্পও এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

তাঁর পিতার অনুপ্রেরণা, পরিবারের সমর্থন, এবং নিজের যৌন পরিচয় নিয়ে সমাজের চোখে আঙুল তুলে ধরা – সবকিছুই এই বইয়ের বিষয়বস্তু। এলজিবিটি সম্প্রদায়ের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং একজন খেলোয়াড় হিসেবে এরিনের আত্ম-প্রকাশ নিঃসন্দেহে অনেকের জন্য সাহস যোগাবে।

**সংগ্রামী জীবন থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা**

এরিনের খেলোয়াড়ি জীবন কখনোই মসৃণ ছিল না। মাঠের লড়াই, শরীর নিয়ে উদ্বেগ, কোচের সঙ্গে মনোমালিন্য, এমনকি নিজের ভালোবাসার মানুষকে সবার সামনে তুলে ধরার মতো কঠিন পরিস্থিতিও তাঁকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।

তবে তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। তাঁর কথায়, “কঠিন পরিস্থিতিতেও আমি হাল ছাড়িনি, বরং এগিয়ে গেছি।”

বর্তমানে, এরিন তাঁর মেয়ের ফুটবল দল পরিচালনা করেন। মেয়েদের খেলা দেখে তিনি আনন্দ পান, কারণ তাঁরা তাঁদের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পাচ্ছে। এরিন ফিলিপসের জীবন নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *