গ্যারিসন রাষ্ট্রে বন্দী ইরিত্রীয়: বিশ্ব কি দেখছে না?

এরিট্রিয়া: এক জনপদ যেখানে স্বাধীনতার আলো আজও পৌঁছায়নি।

বহু বছর আগে, আফ্রিকার একটি ছোট্ট দেশ, এরিট্রিয়া, স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা এসেছিল, কিন্তু মুক্তি আসেনি। বরং দেশটির মানুষ আজও এক কঠিন শাসনের যাঁতাকলে বন্দী।

বিশ্ববাসীর চোখের আড়ালে, এরিট্রিয়ার নাগরিকরা যেন এক দুর্ভেদ্য দুর্গের মধ্যে দিন কাটায়। তাদের স্বাধীনতা, অধিকার, এমনকি জীবনও যেন এক শাসকের ইচ্ছের অধীন।

১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর, এরিট্রিয়ার মানুষ নতুন দিনের স্বপ্ন দেখেছিল। তাদের আশা ছিল, স্বাধীনতা তাদের জন্য আরও ভালো জীবন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।

কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বরং দেশটির প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফওয়ার্কি এক কঠোর শাসনের সূচনা করেন। তিনি গণতন্ত্রের পরিবর্তে সামরিক কায়দায় দেশ শাসনের সিদ্ধান্ত নেন, যা ইতিহাসে “গ্যারিসন স্টেট” নামে পরিচিত।

আফওয়ার্কির শাসনামলে, এরিট্রিয়ার নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো ব্যক্তি পড়াশোনা করতে পারে না, ব্যবসা করার স্বাধীনতা নেই, এমনকি নিজের ধর্ম পালনেরও অধিকার নেই।

দেশের প্রত্যেক নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য সামরিক বাহিনীতে কাজ করতে হয়। যেন পুরো দেশটাই সেনাবাহিনীর অধীনে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিক থেকেও এরিট্রিয়া পিছিয়ে নেই। এখানকার ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর চালানো হয় চরম নির্যাতন। এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূতও এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এরিট্রিয়ার সংখ্যালঘুদের দুরবস্থা নিয়ে বহুবার সরব হয়েছে।

এরিট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফওয়ার্কি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও প্রায়ই সংঘাতে লিপ্ত হন। বর্তমানে ইথিওপিয়ার সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক ভালো নয়, এছাড়াও সুদান সহ বিভিন্ন দেশের গৃহযুদ্ধেও এরিট্রিয়াকে জড়িত থাকতে দেখা যায়।

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে চলমান এই যুদ্ধ পরিস্থিতি এরিট্রিয়ার জনগণের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

আশ্চর্যজনকভাবে, বিশ্ব সম্প্রদায় এরিট্রিয়ার মানুষের এই দুর্দশার প্রতি খুব কমই মনোযোগ দেয়। দেশটির খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খুব একটা আসে না।

ফলে সেখানকার মানুষের দুঃখ-কষ্টগুলো যেন বিশ্ববাসীর কাছে অজানা থেকে যায়। আন্তর্জাতিক মহলের উচিত, এরিট্রিয়ার জনগণের এই নীরব কান্না শোনা এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *