ইথিওপিয়ার আমহারা অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ফানো যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ নতুন করে তীব্র রূপ নিয়েছে। সেনাবাহিনীর দাবি, এই সংঘর্ষে তিন শতাধিক ফানো যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তবে ফানো যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন তথ্য জানানো হয়েছে।
উভয় পক্ষের এই হতাহতের ঘটনার মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সামরিক সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, আমহারার বিভিন্ন অঞ্চলে ফানো যোদ্ধারা হামলা চালানোর পর তাদের নির্মূল করতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শুক্রবার জানানো হয়, সংঘর্ষে ৩১৭ জন ফানো যোদ্ধা নিহত এবং আরও ১২৫ জন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে, ফানো মুখপাত্র আবেবে ফান্তাহুন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর হামলায় ৩০ জনের বেশি যোদ্ধা নিহত হয়নি। ফানো যোদ্ধাদের আরেক মুখপাত্র ইয়োহানেস নিগুসু জানান, লড়াইয়ে ৬০০ জনের বেশি সেনা সদস্য নিহত এবং ৪৩০ জন আহত হয়েছে।
এছাড়াও, ৯৮ জন সেনাকে তারা বন্দী করেছেন এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র তাদের দখলে এসেছে।
আঞ্চলিক এই সংঘাতের মূল কারণ হলো, এক সময়ের মিত্র, যারা টাইগ্রে অঞ্চলের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে যুদ্ধ করেছিল, তাদের মধ্যে মতবিরোধ। টাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (টিপিএলএফ)-এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর দুই বছরের যুদ্ধের পর পরিস্থিতি বদলে যায়।
এরপর থেকেই ইরিত্রিয়া এবং ইথিওপিয়ার মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে, টিপিএলএফ-এর সঙ্গে শান্তি চুক্তির শর্ত নিয়ে আমহারা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এরই জেরে সেনাবাহিনী ও ফানো যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিগবে হাইলে ফানো যোদ্ধাদের সমর্থন করছেন। তবে, আবেবে ফান্তাহুন এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
সংঘাতের এই পরিস্থিতিতে নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি, ইরিত্রিয়া সামরিক সমাবেশের নির্দেশ দিয়েছে এবং ইথিওপিয়া সীমান্ত এলাকায় সেনা মোতায়েন করেছে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (Human Rights Watch) ইথিওপীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।
তাদের মতে, সেনাবাহিনীর অভিযানে বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আফ্রিকা বিষয়ক উপ-পরিচালক লায়েতিসিয়া বাডার বলেছেন, “আমহারায় বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, যা সরকারের আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবির পরিপন্থী।”
এই অঞ্চলের অস্থিরতা আন্তর্জাতিক মহলের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, এতে মানবিক সংকট আরও বাড়তে পারে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা