শিরোনাম: ইথিওপিয়ার অর্থনীতির ভিত, গাধাদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা কেন্দ্র।
আফ্রিকার পূর্বাংশে অবস্থিত ইথিওপিয়া, যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম গাধার বাস। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রতি পাঁচটা গাধার মধ্যে একটা ইথিওপিয়ায় পাওয়া যায়।
এই নিরীহ প্রাণীগুলো দেশটির অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। রাজধানী আদ্দিস আবাবার একটি বিনামূল্যে পশু চিকিৎসা কেন্দ্র, ‘দ্য ডঙ্কি স্যাংচুয়ারি’, সেখানকার গাধাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে থাকে।
এই কেন্দ্রটি একটি ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা পরিচালনা করে।
আদ্দিস আবাবার ব্যস্ত মার্কেট এলাকার কাছে অবস্থিত এই কেন্দ্রে, অসুস্থ গাধাদের চিকিৎসা করা হয়। অনেক মালিক তাদের গাধাদের চিকিৎসার জন্য এখানে নিয়ে আসেন, কারণ এই প্রাণীগুলি তাদের রুটিরুজির প্রধান অবলম্বন।
গাধারা মাঠে কাজ করে, মালামাল বহন করে এবং জল সরবরাহ করে তাদের মালিকদের জীবিকা নির্বাহে সাহায্য করে।
চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কিছু গাধা অস্থিরভাবে পা ছুঁড়ছে, আবার কেউ খাবারের খোঁজে ব্যস্ত। পশু চিকিৎসক এবং কর্মীরা বিভিন্ন অসুস্থতা, যেমন – আঘাত, পেট খারাপ, বা চোখের সমস্যা নিয়ে আসা গাধাদের চিকিৎসা করেন।
গুলুমা বাই নামের এক ব্যক্তি, যিনি প্রতিদিন জল বিক্রি করে সংসার চালান, তার দুটি গাধা অসুস্থ হওয়ায় তাদের চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রে এসেছেন।
তিনি জানান, “আমার গাধাগুলো অসুস্থ হওয়ার কারণে, আমি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমার বাচ্চাদের জন্য খাবার কিনতে পারিনি। আমার খুব অসহায় অবস্থা।”
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইথিওপিয়ায় প্রায় ৯০ লক্ষ গাধা ছিল। সেখানে, যেখানে সাধারণ মানুষের দৈনিক আয় খুবই কম, গাধাগুলি পরিবহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
এদের মাধ্যমে দৈনিক ২০০ থেকে ৪০০ বির (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো) আয় করা সম্ভব, যা অনেকের কাছেই একটি সম্মানজনক রোজগার।
চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়মিত আসা ৬১ বছর বয়সী চানে বায়ে বলেন, “আগে আমরা সনাতন পদ্ধতিতে গাধাদের চিকিৎসা করতাম। কিন্তু এখন তাদের আঘাত বা অন্য কোনো সমস্যা হলে, আমরা দ্রুত এখানে নিয়ে আসি।”
চিকিৎসক ডেরেজ সেগে নিয়মিতভাবে অসুস্থ গাধাদের চিকিৎসা করেন। তিনি জানান, “এই কাজটি কঠিন হলেও, আমি গর্বিত। কারণ আমি এমন অনেক মালিকের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারছি, যারা তাদের গাধার উপর নির্ভরশীল।”
দারিদ্র্যের কারণে অনেক গাধা রাস্তার আশেপাশে পাওয়া প্লাস্টিক ব্যাগ সহ অন্যান্য জিনিস খায়, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই কারণে তাদের প্রায়ই পেটের সমস্যা হয়।
ডেরেজ এই সমস্যাগুলো সমাধানে প্রাণপণে চেষ্টা করেন।
ইথিওপিয়ার এই গাধা চিকিৎসা কেন্দ্রটি, সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু পশুদের স্বাস্থ্য রক্ষা করে না, বরং দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক জীবনেও সহায়তা করে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা