ইথিওপিয়ার আমহারা অঞ্চলে আবারও কি যুদ্ধের দামামা? সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘ফানো’ এবং সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে সেখানকার পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে।
দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী আমহারাদের সশস্ত্র সংগঠন ‘ফানো’ দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ সম্প্রতি তীব্র আকার ধারণ করেছে।
আফ্রিকার এই দেশটির আমহারা অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই জাতিগত উত্তেজনা বিরাজ করছে। ‘ফানো’ গোষ্ঠীটি মূলত আমহারা সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার কথা বলে আসছে। তাদের অভিযোগ, সরকার আমহারা সম্প্রদায়ের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না এবং তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়।
এমনকি তাদের উপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ফানোর উত্থান মূলত ২০১৬ সালের সরকার বিরোধী বিক্ষোভের সময়। এরপর তারা ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকে এবং একসময় সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
একসময় তারা প্রতিবেশী তাইগ্রে অঞ্চলের সংঘাতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিল। কিন্তু পরে শান্তিচুক্তি নিয়ে মতবিরোধের জেরে তারা সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ফানো গোষ্ঠীটি আমহারার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়ার দাবি করছে। তাদের দাবি, তারা অঞ্চলের ৮০ শতাংশের বেশি এলাকার নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে।
যদিও সরকারি সূত্র থেকে এই দাবির সত্যতা স্বীকার করা হয়নি। সরকারি বাহিনীর পক্ষ থেকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং তাদের দমনের চেষ্টা চলছে।
সংঘর্ষের জেরে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন, খাদ্য ও পানীয়ের অভাব দেখা দিয়েছে।
স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য পরিষেবাও ভেঙে পড়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সরকারি বাহিনী নির্বিচারে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেককে হত্যা করা হয়েছে।
যদিও সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আমহারার এই বিদ্রোহ ইথিওপিয়ার জন্য একটি বড় সংকট তৈরি করেছে। এর কারণ, জাতিগত বিভাজন এবং ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে দেশটির স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হচ্ছে।
ফানো গোষ্ঠীর দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামো এবং নেতৃত্বের অভাবের কারণে সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা সফল হচ্ছে না। বিদ্রোহীরা এখনো পর্যন্ত তাদের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস