ওয়াশিংটনে ইথিওপীয় অর্থোডক্স: আধুনিকতার মাঝে প্রাচীন ঐতিহ্য!

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত একটি ইথিওপীয় অর্থোডক্স চার্চ, আধুনিক জীবনের নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তাদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। এই চার্চটি শুধু একটি উপাসনালয় নয়, বরং এটি ইথিওপীয় প্রবাসীদের জন্য সংস্কৃতি আর পরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

রাজধানী শহরটিতে বসবাসকারী ইথিওপীয়ান সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এটি এক টুকরো জন্মভূমি, যা তাদের শিকড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে।

ডি.এস.কে মারিয়াম চার্চ নামে পরিচিত এই উপাসনালয়টি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে এখানে ১৫০০ জনের বেশি নিবন্ধিত সদস্য রয়েছেন এবং প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০০০ জন উপাসক এখানে প্রার্থনা করতে আসেন।

এই চার্চ ইথিওপীয় অর্থোডক্স তেওয়াহেদো চার্চের একটি অংশ, যা আফ্রিকার প্রাচীনতম খ্রিস্টান ধর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানকার পুরোহিত এবং সদস্যরা তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য, বিশেষ করে গিজ ভাষার প্রতি গভীর আগ্রহ দেখান।

এই ভাষাটি ধর্মীয় আচারের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।

চার্চের পুরোহিত আব্রাহাম হাবতে-সেলাসি বলেন, “আমাদের ঐতিহ্য আধুনিক যুগের জন্য খুবই উপযোগী। তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যদি এই ঐতিহ্য, ভাষা এবং ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে, তবে তারা জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে।”

ওয়াশিংটন ডিসির ব্যস্ত জীবনযাত্রায় যেখানে বস্তুগত লাভের দিকেই বেশি মনোযোগ, সেখানে এই চার্চ মানুষকে আধ্যাত্মিকতার দিকে আকৃষ্ট করে।

যুক্তরাষ্ট্রে ইথিওপীয় প্রবাসীদের আগমন মূলত গত ৫০ বছরে বেড়েছে। ১৯৭৪ সালে ইথিওপীয় সম্রাট হাইলে সেলাসির পতনের পর অনেকেই তাদের দেশ ত্যাগ করেন।

বর্তমানে, এই অঞ্চলে বসবাস করা ইথিওপীয়দের সংখ্যা কয়েক লক্ষাধিক। এদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মেরিল্যান্ড এবং ভার্জিনিয়ার বিভিন্ন কাউন্টিতে বসবাস করে, যা ওয়াশিংটন ডিসির কাছাকাছি অবস্থিত।

ইথিওপীয় কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট সেহায়ে তেফেরা বলেন, এই সম্প্রদায়ের মানুষজন এলাকার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

ডি.এস.কে মারিয়াম চার্চ তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমহারিক এবং ইংরেজি ভাষায়ও প্রার্থনা ও ধর্মীয় আলোচনা করে থাকে।

চার্চের দেয়ালে ইথিওপীয় পতাকার সবুজ, হলুদ ও লাল রঙের চিত্রগুলো শোভা পায়।

২১ বছর বয়সী কান্নাজেগেলিলা মেজগেবু, যিনি ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় জন্মগ্রহণ করেছেন, বলেন, “এখানে নিজেকে বাড়ির মতোই মনে হয়।

ইথিওপীয় অর্থোডক্স চার্চের সুন্দর আচার-অনুষ্ঠানগুলো রয়েছে। প্রত্যেক দিনের নিজস্ব একটি গভীর অর্থ আছে।”

বাল্টিমোরের মর্গান স্টেট ইউনিভার্সিটির এই শিক্ষার্থী আরও জানান, শহরের নানা ব্যস্ততার মাঝে ঐতিহ্য ধরে রাখা কঠিন হতে পারে, তবে এটি খুবই মূল্যবান।

এর মাধ্যমে তরুণ ইথিওপীয়-আমেরিকানরা তাদের শিকড়ের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করতে পারে এবং আধ্যাত্মিক পথে চলতে উৎসাহিত হয়।

যুব বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেতা বেজা বিলিলিগনে বলেন, “আমাদের প্রতিটি ঐতিহ্যের পেছনে গভীর অর্থ লুকানো আছে।”

তিনি উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করেন, উপাসনার সময় জুতা খুলে রাখা হয় সম্মানের প্রতীক হিসেবে।

নেটেলা বা সাদা শাল, যা উপাসকরা পরিধান করেন, তা নম্রতা ও পবিত্রতার প্রতীক।

বিলিলিগনে আরও জানান, ধূপের ধোঁয়া কুমারী মেরির প্রতীক এবং আগুনের কয়লা যিশুর ঐশ্বরিকতার প্রতীক।

এখানে উপাসনা একটি আন্তঃপ্রজন্মীয় প্রক্রিয়া, যা মানুষের অনুভূতিকে জাগ্রত করে।

প্রার্থনা ও উপাসনার সময় শিশুরা যেমন হাসে, তেমনি পুরোহিতদের মন্ত্র পাঠও শোনা যায়।

বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন, যা ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে।

বেজা বিলিলিগনে বলেন, “আমাদের অনেক ঐতিহ্য ও প্রার্থনা মুখস্থ করতে হয়।

যতক্ষণ মানুষ জীবিত থাকবে, ততক্ষণ এই ঐতিহ্যগুলোও টিকে থাকবে।”

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *