ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনতে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শুক্রবার ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভে মিলিত হয়ে ইইউ-র পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা এই প্রস্তাব অনুমোদন করেন।
এটিকে ‘লভিভ বিবৃতি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ট্রাইব্যুনালের লক্ষ্য হলো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা।
ইইউ-র শীর্ষ কূটনীতিক, কাইয়া কাল্লাস সাংবাদিকদের বলেন, “এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। রাশিয়ার আগ্রাসনকে কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না, তাই এই ট্রাইব্যুনাল গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই ট্রাইব্যুনাল নিশ্চিত করবে যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করা হবে।”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আক্রমণের অপরাধের জন্য একটি শক্তিশালী ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলে তা যে কোনো সম্ভাব্য আক্রমণকারীকে দুবার ভাবতে বাধ্য করবে।”
অন্যদিকে, রাশিয়া এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শুক্রবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে জানান, “আমরা এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি না।”
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে ইইউ-র একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনাল গঠনের ফলে পুতিন এবং তাঁর কর্মকর্তাদের বিচার করা সম্ভব হবে। তবে, তাঁদের সরকারি পদে থাকার কারণে বিচার প্রক্রিয়া এখনই শুরু করা যাবে না।
তবে তদন্ত করে অভিযোগ প্রস্তুত রাখা হবে, যা পদ ছাড়ার পরেই কার্যকর করা হবে।
ডাচ বিচারমন্ত্রী ডেভিড ভ্যান ওয়েল এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি রয়টার্সকে বলেন, “এই ট্রাইব্যুনাল একটি শূন্যতা পূরণ করবে, যা বর্তমানে বিদ্যমান। এর মাধ্যমে কীভাবে একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য নেতৃত্বকে বিচারের আওতায় আনা যায়, সেই পথ তৈরি হবে।”
যদিও এই ট্রাইব্যুনাল সম্ভবত এই বছর থেকেই কাজ শুরু করতে পারে, তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এটিই একমাত্র আইনি পদক্ষেপ নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইতোমধ্যেই পুতিন এবং অন্যান্য রুশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় শিশুদের জোরপূর্বক নির্বাসন এবং দেশটির জ্বালানি কেন্দ্রগুলোতে হামলার জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এদিকে, ফ্রান্স ঘোষণা করেছে যে তারা ইউক্রেনকে সরবরাহ করা প্রায় ৬০টি ফরাসি-নির্মিত সিজার হাউইটজার বন্দুকের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জব্দকৃত রুশ সম্পদ থেকে পাওয়া আয় ব্যবহার করা শুরু করবে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারোত বলেন, “আমরা শান্তি চাই। আর শান্তির পথে একমাত্র বাধা হলেন ভ্লাদিমির পুতিন।”
তিনি আরও যোগ করেন, রুশ প্রেসিডেন্টের ওপর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
লভিভে, ইইউ-র কাল্লাস ইউক্রেনীয় অস্ত্র কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করার জন্য জব্দকৃত রুশ সম্পদ থেকে ১ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা) ছাড় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য ১ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছি, যাতে ইউক্রেন নিজেদের আরও ভালোভাবে রক্ষা করতে পারে। এই তহবিল ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোকে সরাসরি সহায়তা করবে এবং আগামী মাসগুলোতে অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা নিশ্চিত করবে।”
পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৩৩ লক্ষ কোটি টাকা) জব্দ করেছে, যার বেশিরভাগই ইউরোপে রাখা আছে।
শুক্রবার, পুতিন তাঁর মিত্রদের সামনে এক সামরিক কুচকাওয়াজে ঘোষণা করেন যে রাশিয়া ইউরোপে বিজয়ী হবে। এই কুচকাওয়াজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও উপস্থিত ছিলেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা