ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তিতে নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে বিশাল পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তারা ২০ বিলিয়ন ইউরো (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার সমান) বিনিয়োগের মাধ্যমে এআই ‘গিগা-ফ্যাক্টরি’ তৈরি করার পরিকল্পনা করছে।
এই বৃহৎ পরিকল্পনাটির মূল লক্ষ্য হলো, উন্নত সুপারকম্পিউটার স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে এআই গবেষণায় টেক্কা দেওয়া।
বর্তমানে, এআই প্রযুক্তির দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন অনেক এগিয়ে আছে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে প্রভাবশালী ৪০টি এআই মডেল তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে চীনে এই সংখ্যা ১৫ এবং ইউরোপে মাত্র তিনটি (যা সবই ফ্রান্সের)।
ইইউ চাইছে স্বাস্থ্যসেবা, বায়োটেক, শিল্প, রোবোটিক্স এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন ঘটিয়ে এই প্রযুক্তিগত দৌড়ে শামিল হতে।
এই ‘গিগা-ফ্যাক্টরি’গুলোতে এক লাখেরও বেশি এআই প্রসেসর ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে, যা উন্নত প্রযুক্তির গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিটি ফ্যাক্টরি তৈরিতে প্রায় ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ইউরো খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে অর্থ যোগান দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক-এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এছাড়াও, ইইউ নিজস্ব এআই সেমিকন্ডাক্টর, অর্থাৎ উন্নত মানের চিপ তৈরির দিকেও নজর দিচ্ছে, যা এই ফ্যাক্টরিগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক।
তবে, এই বিশাল পরিকল্পনার মাঝে বিতর্কও দানা বাঁধছে। ইইউ-এর এআই বিষয়ক আইন (AI Act) কিছুটা শিথিল করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইউরোপীয় কনজিউমার অর্গানাইজেশন (BEUC) মনে করে, আইনের বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, কারণ ভোক্তারা এআই-এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে চিন্তিত।
ইইউ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এআই আইনের মূল নীতিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ব্যবসার সুবিধার জন্য কিছু প্রশাসনিক জটিলতা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই বিশাল বিনিয়োগ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা ইইউকে এআই প্রযুক্তির বিশ্বে একটি শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান