যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্ক নীতির মোকাবিলায় প্রস্তুত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন বলেছেন, বাণিজ্য নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে চায় ইইউ, তবে প্রয়োজনে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও তারা পিছপা হবে না।
সম্প্রতি এক বক্তব্যে ভন ডের লিয়েন জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ সঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, “আমাদের নিজেদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার জন্য যা যা দরকার, তার সবই আমাদের আছে।
বিশ্বের বৃহত্তম একক বাজার আমাদের হাতে, দর কষাকষির ক্ষমতা আছে, এবং প্রতিরোধ করার শক্তিও রয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য নতুন শুল্ক ঘোষণার প্রেক্ষাপটে এমন মন্তব্য করেন ভন ডের লিয়েন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, শুল্ক আরোপ হলে তা সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়াবে।
এর ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানি করা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর জবাবে ইইউও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর প্রায় ২৬ বিলিয়ন ইউরোর (বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি) পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়।
ভন ডের লিয়েন জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-সহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে, যেমন—অন্যায্য ভর্তুকি এবং বাজারের সুবিধা না পাওয়া।
তবে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলির সমাধান হবে না, বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তিনি জানান, ইইউ ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে তারা আলোচনার টেবিলে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে বসবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে, ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন, অন্যান্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘অন্যায়’ করছে। তিনি জানান, অন্যান্য দেশের বাণিজ্য নীতির তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কনীতি ‘খুব ভালো’ হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্কনীতি কার্যকর হলে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব না পড়লেও, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষ করে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, তা বাংলাদেশের আমদানি খরচও বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া, তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের রপ্তানি খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উচিত হবে— পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (World Trade Organization – WTO) মতো আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালোভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরা।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা