মার্কিন সহায়তা বন্ধ: রেডিও ফ্রি ইউরোপ নিয়ে ইইউর কড়া প্রতিক্রিয়া!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক রেডিও ফ্রি ইউরোপ-এর অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শীতল যুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত এই বেতার কেন্দ্রটি, রাশিয়া, ইউক্রেন, ইরান ও আফগানিস্তানসহ ২৩টি দেশে খবর পরিবেশন করে থাকে।

ইইউ’র পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান, কাজা কাল্লাস, এই প্রসঙ্গে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের অনুদান বন্ধ করে দেওয়ায় ইইউ-এর পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে সেই শূন্যস্থান পূরণ করা সম্ভব নয়।

জানা গেছে, প্রযুক্তি বিলিয়নেয়ার এলন মাস্ক, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে সরকারি ব্যয় সংকোচনের দায়িত্বে ছিলেন, গত মাসে রেডিও ফ্রি ইউরোপ বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি এটিকে ‘বামপন্থী উন্মাদদের নিজস্ব আলোচনা’ হিসেবে অভিহিত করেন।

বাল্টিক অঞ্চলের দেশ এস্তোনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া কাল্লাস রেডিও ফ্রি ইউরোপকে ‘গণতন্ত্রের বাতিঘর’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, তারুণ্যে এই রেডিও ছিল তথ্যের প্রধান উৎস।

সোমবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কাল্লাস বলেন, ‘এখন আমাদের প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্রের এই অভাব পূরণে আমরা কি সহায়তা করতে পারি? এর উত্তর হলো…সহজভাবে নয়।’

তিনি আরও যোগ করেন, ইইউ ‘চেষ্টা করে দেখবে’।

চেক প্রজাতন্ত্র চাইছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেন প্রাগ-ভিত্তিক এই গণমাধ্যমটিকে সমর্থন করে। চেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জান লিপাভস্কি বৈঠকের আগে জানান, তিনি তার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান, কীভাবে অন্তত আংশিকভাবে এই বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার চালু রাখা যায়।

তিনি বলেন, ‘যদি এটি বন্ধ হয়ে যায়, তবে সহজে পুনরায় চালু করা যাবে না।’

ইতিমধ্যে ইইউ আলোচনা শুরু করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি-র কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট শূন্যতা তারা কতটা পূরণ করতে পারবে। একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক বলেছেন, ইইউ এই ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না।

তবে, তারা এমন প্রকল্পগুলিতে সমর্থন যোগাতে পারে যা তাদের স্বল্পমেয়াদী স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

রেডিও ফ্রি ইউরোপ ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর এক বছর পর, বুলগেরিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার মতো দেশগুলোতে এটি খবর প্রচার শুরু করে।

এর প্রধান লক্ষ্য ছিল, ‘লৌহ যবনিকা’র (Iron Curtain) পেছনে থাকা শ্রোতাদের কাছে নিরপেক্ষ খবর পৌঁছে দেওয়া। ১৯৫৩ সাল থেকে রেডিও লিবার্টি রাশিয়ান এবং অন্যান্য স্থানীয় ভাষায় সোভিয়েত ইউনিয়নে সম্প্রচার শুরু করে।

রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টির তথ্য অনুযায়ী, তারা প্রতি সপ্তাহে ২৩টি দেশে ২৭টি ভাষায় প্রায় ৪ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের কাছে খবর পৌঁছে দেয়। বর্তমানে তাদের ১,৭০০ জনের বেশি কর্মী কাজ করেন।

পোল্যান্ডের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কাটারজিনা পিসারস্কা এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তার বাবা-মা এই রেডিওর মাধ্যমেই চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার খবর জানতে পেরেছিলেন, যখন পোলিশ কমিউনিস্ট সরকার বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করছিল।

তিনি এই মার্কিন সিদ্ধান্তকে বিশেষ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য ‘বিশ্বের স্বৈরশাসকদের প্রতি উপহার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া রেডিও ফ্রি ইউরোপকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে, যার ফলে এটির কার্যক্রম কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘এই গণমাধ্যমগুলোকে রাশিয়ান ফেডারেশনে জনপ্রিয় বা প্রয়োজনীয় হিসেবে বিবেচনা করা কঠিন’।

তিনি আরও যোগ করেন, অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্তটি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *