আমেরিকা-ইউরোপের বাণিজ্য যুদ্ধ: ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইইউ-এর কড়া জবাব!

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপ মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক বসানোর প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে।

ইইউ’র এই সিদ্ধান্তের ফলে বাদাম থেকে শুরু করে ইয়ট পর্যন্ত প্রায় ২১ বিলিয়ন ইউরোর (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি) মার্কিন পণ্যের দাম বাড়বে।

ইউরোপীয় কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপকে ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘ক্ষতিকর’ হিসেবে মনে করে। তাদের মতে, এর ফলে উভয় পক্ষেরই অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ইইউ মনে করে, আলোচনার মাধ্যমে একটি ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান সম্ভব। সেই লক্ষ্যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে, তবে এই শুল্ক যে কোনো সময় তুলে নেওয়া হতে পারে।

এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে হাঙ্গেরি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক। হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজ্জার্তো এক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ ইউরোপীয় অর্থনীতি ও নাগরিকদের আরও বেশি ক্ষতির কারণ হবে, কারণ এর ফলে পণ্যের দাম বাড়বে। আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান সম্ভব, প্রতিশোধের মাধ্যমে নয়।’

এই ঘটনার কয়েকদিন আগে চীনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যগুলোর ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে। চীন সরকার ঘোষণা করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে, যা আগে ছিল ৩৪ শতাংশ।

ইইউ’র শুল্কের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে এমন কিছু পণ্যকে বেছে নেওয়া হয়েছে যা অন্য দেশ থেকে সহজেই আমদানি করা সম্ভব। এর পাশাপাশি, রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কিছু রাজ্যের পণ্যকেও চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকারের রাজ্য লুইজিয়ানার সয়াবিন এবং কানসাস ও নেব্রাস্কার গরুর মাংস, ফ্লোরিডার সিগারেট ও নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া এবং আলাবামার কাঠের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

ইইউ আরও জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থা বা ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারে। বর্তমানে, পরিষেবা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউ’র ১০৯ বিলিয়ন ইউরোর বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে।

ইইউ কমিশনার মারোস সেফকোভিচ বলেছেন, শুল্কের ক্ষেত্রে তারা ‘একই মুদ্রায় পরিশোধ’ বা ‘পাল্টা আঘাতের’ নীতিতে বিশ্বাসী নয়। তবে, ইউরোপীয়দের জন্য তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর শুল্ক আরোপের সুযোগ ক্রমেই কমে আসছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এই পরিস্থিতিতে, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা এখনও বিদ্যমান। ইউরোপীয় কমিশন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি ‘শূন্য শুল্ক’ প্রস্তাব দিয়েছে, যার অর্থ হল উভয় দেশই পরস্পরের থেকে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক আরোপ করবে না।

এই বাণিজ্য বিরোধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে। তাই, এই ঘটনার ওপর আমাদের বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *