যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার উপর আরও চাপ, ইইউ নেতাদের কড়া বার্তা!

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়াকে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে প্রস্তুত হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ নিতে জোটের নেতারা একমত হয়েছেন, যদিও হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের আপত্তির কারণে ঐক্যে কিছুটা ফাটল দেখা দিয়েছে।

ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর ইইউ নেতারা এই সিদ্ধান্ত নেন।

জেলেনস্কি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মেলনে যোগ দিয়ে ইইউ নেতাদের প্রতি রাশিয়ার উপর চাপ কমানো বন্ধ না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রাশিয়াকে অবশ্যই তাদের ভূমি থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাদের আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

তবে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের কারণে ইইউ-এর এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে কিছুটা চিড় ধরেছে। তিনি ইউক্রেনকে সমর্থন করার বিষয়ে ইইউ-এর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে রাজি হননি। এর আগে, দুই সপ্তাহ আগেও তিনি একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

কূটনীতিকরা মনে করেন, হাঙ্গেরি শেষ পর্যন্ত ইইউ-এর পরিকল্পনা সমর্থন করবে, তবে অরবানের এই অনীহা নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল রাখার ক্ষেত্রে জোটের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে।

এদিকে, ন্যাটোর সাবেক মহাসচিব এবং বর্তমানে নরওয়ের অর্থমন্ত্রী জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ট্রান্সআটলান্টিক জোটে সমর্থন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিরুৎসাহিত করার পরিবর্তে ন্যাটোতে তাদের অবদান আরও বাড়াতে উৎসাহিত করবে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ন্যাটোতে দেওয়া অবদান কমালেও অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং তাদের ভূমিকা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।

স্টলটেনবার্গ উল্লেখ করেন, ন্যাটোর শক্তিশালী জোট হিসেবে টিকে থাকার জন্য উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যা বিগত ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, অতীতেও মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে, তবে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে আমরা সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।

তবে, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ইইউ-এর ৪০ বিলিয়ন ইউরোর পরিকল্পনা বড় দেশগুলোর সমর্থন না পাওয়ায় বাস্তবায়িত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কাচা কাল্লাস সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ৫ বিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ২০ লক্ষ শেল সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, ২০৩০ সালের মধ্যে সম্ভাব্য আগ্রাসন প্রতিরোধে ইউরোপকে সক্ষম করতে ৮০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এই বিষয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এই শীর্ষ সম্মেলনকে ইউরোপকে নিরাপদ, সশস্ত্র এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাওসেদা বলেছেন, ইউরোপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের পরিস্থিতির মতো একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার হওয়া থেকে বাঁচতে হলে আমাদের অবশ্যই নিজেদের শক্তিশালী করতে হবে।

স্পেন ও ইতালির মতো দেশগুলো মনে করে, নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি শুধু রাশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা প্রতিরক্ষা ব্যয়ের একটি বিস্তৃত সংজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যেখানে সাইবার নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ৮০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর ঋণ এবং ৬৫০ বিলিয়ন ইউরোর অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার সুযোগ। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের জন্য অনুদান দেওয়ার বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।

তবে নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির মতো দেশগুলো এই ধরনের অনুদানের জন্য সাধারণ ঋণ ব্যবহারের বিরোধিতা করছে।

জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ট্রাম্পের অন্য ন্যাটো সদস্যদের আরও বেশি কিছু করার আহ্বান জানানোটা “যুক্তিসঙ্গত” এবং “ন্যায্য”। তিনি আরও যোগ করেন, “সুখবর হলো, ইউরোপীয় দেশগুলো এখন বেশি কিছু করছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *