যুদ্ধ বন্ধে ইইউ’র নতুন পদক্ষেপ? রাশিয়াকে রুখতে কি পারবে?

ইউক্রেন যুদ্ধ: রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা? ইইউ-এর পরিকল্পনা

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে রাশিয়ার উপর চাপ বজায় রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাণিজ্য শুল্ক এবং পুঁজি নিয়ন্ত্রণের মতো পদক্ষেপ নিতে পারে।

এই বিষয়ে ব্রাসেলস-এর পক্ষ থেকে আলোচনা চলছে। হাঙ্গেরি যদি রাশিয়ার উপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভেটো দেয়, সেক্ষেত্রে এই নতুন পদক্ষেপগুলি নেওয়া হতে পারে। জুলাই মাসেই এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞার একটি বড় অংশ, যার মধ্যে রুশ সম্পদ জব্দ করার মতো বিষয় রয়েছে, তা নতুন আইনি কাঠামোর অধীনে আনা যেতে পারে।

এমনটা করা গেলে হাঙ্গেরির ভেটো এড়ানো সম্ভব হবে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সরকার দীর্ঘদিন ধরেই মস্কোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং রাশিয়ার থেকে দেশটির প্রায় ৮৫ শতাংশ গ্যাস আসে।

বর্তমানে, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনারও চেষ্টা চলছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দুই দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসতে পারেন।

তবে, সরাসরি আলোচনার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেখানে যাবেন না বলেই জানা গেছে।

গত সপ্তাহে, ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনে বৈঠক করে রাশিয়াকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।

ইউক্রেন এতে রাজি হলেও রাশিয়া রাজি হয়নি। এর মধ্যেই ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৭তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য রুশ অর্থনীতিকে দুর্বল করা এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করা।

২০২২ সাল থেকে ব্রাসেলস মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়িয়েছে।

এর মধ্যে রুশ তেলের উপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা, জ্বালানির দাম কমানো এবং ইউরোপীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করার মতো পদক্ষেপ উল্লেখযোগ্য।

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে গণমাধ্যম সংস্থা থেকে শুরু করে বিমান চলাচল এবং টেলিযোগাযোগের মতো রাশিয়ার অর্থনীতির বিভিন্ন অংশে প্রভাব পড়েছে।

এছাড়াও, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় প্রায় ২০০টি ‘শ্যাডো ফ্লিট’ ট্যাঙ্কারকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই জাহাজগুলির মালিকানা সম্পর্কে স্বচ্ছতা নেই এবং পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তাদের কোনো আর্থিক বা বীমা সম্পর্ক নেই।

এর ফলে তারা আর্থিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে পারে।

ইইউ বলছে, চীন এবং তুরস্কের কিছু সংস্থা রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সাহায্য করছে।

তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে, সামরিক ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সরবরাহকারী ৩০টি কোম্পানির উপরও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

ফ্রান্সের মন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারোত জানিয়েছেন, রাশিয়া ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর পথ খুঁজে বের করেছে।

তাই তাদের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ করতে না পারলে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানো হবে।

যদিও ১৭তম দফা নিষেধাজ্ঞা সবেমাত্র গৃহীত হয়েছে, ইইউ মন্ত্রীরা ইউক্রেন যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে পুতিনের ক্ষমতা কমাতে আরও কী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করছেন।

শেয়ার বাজার থেকে রাশিয়া যাতে সহজে পুঁজি সংগ্রহ করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে পুঁজি নিয়ন্ত্রণ এবং বাণিজ্য শুল্কের মতো পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে।

কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী মাসে এমন প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে, যেখানে ২০২৫ সাল থেকে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ চুক্তি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ২০২৭ সাল থেকে রাশিয়ার সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে।

তবে, তেল রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এবং টার্কস্ট্রিমের মাধ্যমে ইইউ-তে গ্যাস বিক্রি করে এখনো বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে।

এছাড়াও, ইইউ রাশিয়ান জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইইউ-এর এই পদক্ষেপগুলি রাশিয়ার উপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

কারণ, নিষেধাজ্ঞার পরেও রাশিয়ার অর্থনীতি টিকে রয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *