ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়ার উপর চাপ আরও বাড়াতে একজোট হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বৃহস্পতিবার, ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে আরও কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ তেল শিল্পের উপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যদিও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই পদক্ষেপগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে রাজি নয়।
তাদের দাবি, এসব নিষেধাজ্ঞার তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
মূলত, রাশিয়ার সামরিক অভিযানের খরচ যোগান দেওয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইইউ-এর এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ব্রাসেলসে এক সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা এই পদক্ষেপের অপেক্ষায় ছিলাম। ঈশ্বর একে সফল করুন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো শান্তির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং, ইউরোপীয় নেতারা রাশিয়া থেকে আসা হুমকির ব্যাপারে ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন।
ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রন্ট লাইনে রাশিয়ার বিশাল সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় প্রতিদিনই রাশিয়ার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউক্রেনের বিদ্যুৎ গ্রিডকে লক্ষ্য করে আঘাত হানছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার তেল শোধনাগার এবং উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো তাদের জ্বালানি খাত থেকে আসা রাজস্ব।
এই রাজস্বের মাধ্যমেই প্রেসিডেন্ট পুতিন মূল্যস্ফীতি না বাড়িয়ে এবং মুদ্রা দরকে স্থিতিশীল রেখে সামরিক খাতে অর্থ ঢালতে পারছেন।
ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো রাশিয়ার তেল ও গ্যাস, নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়া রুশ ট্যাংকারের বহর এবং দেশটির আর্থিক খাত।
এছাড়াও, ইইউ-এর সদস্য দেশগুলোতে রুশ কূটনীতিকদের চলাচলের উপরও নতুন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অন্যান্য দেশকেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্যেও এটি একটি ভালো বার্তা।
নতুন নিষেধাজ্ঞার খবর আসার পর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ২ ডলারের বেশি বেড়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো এই খবরকে তেমন একটা পাত্তা দেয়নি।
একটি জনপ্রিয় রুশ দৈনিক ‘কমসোমলস্কায়া প্রাভদা’ জানিয়েছে, “চাপ থাকুক বা না থাকুক, জেলেনস্কির জন্য এতে কিছুই বদলাবে না।
এমনকি শান্তিও এতে আরও দূরে চলে যাবে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ এক প্রতিবেদনে বলেছে, নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো “পূর্বের মতোই বেদনাদায়ক, তবে মারাত্মক নয়।
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়ার উপর চাপ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
নতুন ইইউ নিষেধাজ্ঞাগুলো চূড়ান্ত করতে প্রায় এক মাস সময় লেগেছে।
এর আগে, ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৮ দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
তবে, কোন ব্যক্তি বা কোন বিষয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, তা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে প্রায়ই কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়।
এছাড়াও, রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল ভালোভাবেই রপ্ত করেছে।
এদিকে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো রুশ তেল কোম্পানি রোসনেফ্ট ও লুকোইলের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে দ্রুত বৈঠকের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে, কারণ তিনি মনে করেন এতে সময়ের অপচয় হবে।
পুতিন আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি না হওয়ায় ট্রাম্পের শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টাগুলোও ভেস্তে যেতে বসেছে।
বুধবার, রাশিয়া তাদের কৌশলগত পারমাণবিক বাহিনীর মহড়া পরিচালনা করে।
যেন এটি রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডারের প্রতি একটি সতর্কবার্তা ছিল।
যুদ্ধ পরিস্থিতি এখনো আগের মতোই আছে।
উভয় পক্ষই রাতের বেলা ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছে।
ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের একটি গ্রামে রাশিয়া ‘ডাবল-ট্যাপ’ ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
প্রথম হামলায় উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়।
এতে এক উদ্ধারকর্মী নিহত এবং আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
কিয়েভের তিনটি জেলায় রুশ ড্রোন হামলায় আটজন আহত হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপের উপর দিয়ে যাওয়া ১৩৯টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
তবে, ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা চালিয়ে তেল শোধনাগার এবং অন্যান্য জ্বালানি কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে কিনা, সে বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস