শিরোনাম: বাণিজ্য যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র: বিশ্ব বাজারের উপর প্রভাব
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক এখন এক সংকটপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। উভয় পক্ষই শুল্ক আরোপ ও প্রত্যাহারের হুমকি দেওয়ায় একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।
ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে প্রস্তুত, তবে প্রয়োজনে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায়, ইইউ এই পদক্ষেপ নিতে চাইছে। ইইউ বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফকোভিক জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে।
তবে, আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানোই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এর আগে শিল্পপণ্যের ওপর ‘শূন্য-থেকে-শূন্য’ শুল্ক চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু, পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইইউ কিছু মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে চলেছে।
এই পদক্ষেপ ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এবং ১৫ মে’র মধ্যে দ্বিতীয় দফায় আরও কিছু শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
বাণিজ্য কমিশনার সেফকোভিক আরও জানান, আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে। তবে, প্রয়োজনে ইইউ ‘অ্যান্টি-কোয়ার্সন ইন্সট্রুমেন্ট’ (Anti-Coercion Instrument – ACI) ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার মাধ্যমে তারা মার্কিন কোম্পানিগুলোর সরকারি চুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আনতে পারে।
তবে, এই পরিস্থিতিতে কিছু ইইউ সদস্য রাষ্ট্র সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এসিআইকে ‘পরমাণু বিকল্প’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না বলে মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষণবাদী নীতির কারণে ইইউ-কে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ এবং অন্যান্য পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতির দিক থেকেও ব্রাসেলসের তুলনায় ওয়াশিংটনের অবস্থান বেশ সুবিধাজনক।
কারণ, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইইউ-এর পণ্য আমদানি ছিল প্রায় ৩৩৪ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৩৭ হাজার কোটি মার্কিন ডলার), যেখানে ইইউ-এর রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৩২ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ৫৮ হাজার ২শ কোটি মার্কিন ডলার) বেশি।
নেদারল্যান্ডসের বাণিজ্যমন্ত্রী রেইনেট ক্ল্যাভার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এবং উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের শান্ত থাকতে হবে এবং এমনভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে যা উত্তেজনা কমায়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি এসেছে। ইইউ যদি মার্কিন ‘বুরবন’ (এক ধরনের হুইস্কি) এর ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ইইউ-এর অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারে বলে জানা গেছে।
এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্স ও ইতালির মতো ওয়াইন ও স্পিরিট উৎপাদনকারী দেশগুলো উদ্বেগে রয়েছে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশে এখনো দৃশ্যমান না হলেও, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে এর প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।