মহাবিশ্বে আলোড়ন! ইউক্লিড টেলিস্কোপের আবিষ্কারে তোলপাড়

মহাকাশে অনুসন্ধানের দিগন্ত উন্মোচন: ইউক্লিড টেলিস্কোপের আবিষ্কারে উচ্ছ্বাস।

মহাবিশ্বের রহস্যময় জগৎ নিয়ে কৌতূহল মানুষের চিরন্তন। নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, কৃষ্ণবস্তু – এসবের গভীরে লুকিয়ে থাকা রহস্য ভেদ করতে বিজ্ঞানীরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি, ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ESA)-এর ইউক্লিড টেলিস্কোপের পাঠানো তথ্যে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। এই টেলিস্কোপের পাঠানো ছবিগুলি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি “আবিষ্কারের এক নতুন দিগন্ত”।

ইউক্লিড টেলিস্কোপ মূলত তৈরি করা হয়েছে ডার্ক ম্যাটার বা কৃষ্ণবস্তু এবং ডার্ক এনার্জি বা কৃষ্ণ শক্তি নিয়ে গবেষণার জন্য। এই দুই রহস্যময় উপাদান মিলে আমাদের মহাবিশ্বের ৯৫ শতাংশ তৈরি করে।

কিন্তু এদের স্বরূপ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত খুব কমই জানতে পেরেছেন। ইউক্লিড টেলিস্কোপ সেই অজানা জগৎ উন্মোচনের চাবিকাঠি হতে চলেছে।

এই টেলিস্কোপ ইতোমধ্যে ২ কোটি ৬০ লক্ষ গ্যালাক্সির ছবি তুলেছে, যা ১০ বিলিয়ন বছরের মহাজাগতিক ইতিহাসকে ধারণ করে। বিজ্ঞানীরা এই ছবিগুলি বিশ্লেষণ করে গ্যালাক্সির গঠন, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং মহাবিশ্বের বিবর্তনের অজানা দিকগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করছেন।

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার গ্যালাক্সির একটি বিস্তারিত তালিকা। এর মাধ্যমে গ্যালাক্সির গঠনবৈচিত্র্য এবং তাদের মধ্যে সংঘর্ষের মতো ঘটনাগুলোও স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আবিষ্কারগুলো ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও স্পষ্ট করবে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী, ভারী বস্তুর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র স্থান-কালের বক্রতা সৃষ্টি করে।

ইউক্লিড টেলিস্কোপ সেই বক্রতার ছবিও তুলেছে, যা ‘gravitational lensing’ বা মহাকর্ষীয় লেন্সিং নামে পরিচিত। এর ফলে দূরের গ্যালাক্সির আলো বেঁকে আসে এবং তাদের ছবি আরও উজ্জ্বল ও স্পষ্ট হয়।

এই লেন্সিং ঘটনার ছবি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা গ্যালাক্সির চারপাশে ডার্ক ম্যাটারের বিতরণ সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়াও, ডার্ক ম্যাটারের ঘনত্ব এবং গঠন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে।

যুক্তরাজ্যের স্পেস এজেন্সির প্রধান বিজ্ঞানী অধ্যাপক অ্যাডাম আমারা এই আবিষ্কারে অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি জানান, “আমরা যে উদ্দেশ্যে এই মিশন শুরু করেছিলাম, সেই অনুযায়ীই ফল পাওয়া যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস, এই তথ্যগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর মাধ্যমে আমরা মহাকাশ সম্পর্কে নতুন অনেক কিছু জানতে পারব।”

ইউক্লিড টেলিস্কোপ আগামী ছয় বছরে ১.৫ বিলিয়নের বেশি গ্যালাক্সির ছবি তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ডার্ক এনার্জির প্রভাব এবং মহাবিশ্বের প্রসারণের হার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন। এমনকি, মহাকাশে নতুন ধরনের কোনো বস্তুর সন্ধানও পাওয়া যেতে পারে।

মোটামুটিভাবে, আমাদের মহাবিশ্বের প্রায় ৫% সাধারণ বস্তু, ২৫% ডার্ক ম্যাটার এবং ৭০% ডার্ক এনার্জি দিয়ে গঠিত। ইউক্লিড টেলিস্কোপের এই আবিষ্কারগুলো মহাবিশ্বের এই রহস্যময় উপাদানগুলো সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *