আতঙ্কে মার্কিন গবেষকরা! বিজ্ঞানীদের আশ্রয়স্থল হতে চলেছে ইউরোপ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের আকৃষ্ট করতে ইউরোপের প্রচেষ্টা: ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে কি সুযোগ তৈরি হচ্ছে?

যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা গবেষক ও শিক্ষাবিদদের নিজেদের দেশে টানতে চাইছে ইউরোপ। ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশগুলো এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা দেখছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘চুজ ইউরোপ ফর সায়েন্স’ সম্মেলনে এই ঘোষণা আসে। সম্মেলনে যোগ দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লিয়েন। এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকদের ইউরোপে আসার জন্য উৎসাহিত করা।

কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত গবেষণা খাতে বরাদ্দ কমানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে। এর ফলে, অনেক গবেষক ও শিক্ষক তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করছে, এই পরিস্থিতি তাদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে। তারা স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, বায়োডাইভার্সিটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মহাকাশ গবেষণা খাতে কাজ করা গবেষকদের আকৃষ্ট করতে চায়।

ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ বিনিয়োগের লক্ষ্য রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানোর হুমকি। এছাড়াও, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের কারণে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কড়া পদক্ষেপ নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

এমনকি, যেসব শিক্ষক গাজা যুদ্ধ নিয়ে কথা বলছেন, তাঁদেরও শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাখাতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হতে পারে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এরই মধ্যে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মীদের ‘ফ্রান্সকে বেছে নেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জার্মানির নীতিনির্ধারকরাও এই বিষয়ে আগ্রহী। তাঁরা এক হাজার গবেষককে আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা করছেন। জার্মানির ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্চ এপ্রিল মাসে বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকার বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর কঠোর নীতি গ্রহণ করছে। তাই আমেরিকার গবেষকরা এখন ইউরোপের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এটা আমাদের জন্য বিশাল সুযোগ।”

তবে, ইউরোপের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপে গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং বেতন কিছুটা কম। এছাড়া, ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতাও একটি সমস্যা।

যদিও, ইউরোপীয় দেশগুলো বলছে, জীবনযাত্রার কম খরচ এবং উন্নত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এই বিষয়গুলো পুষিয়ে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ৫৩.২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬,২০০ বিলিয়ন টাকা)। যেখানে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের পরিমাণ ১০.৭৪ বিলিয়ন ডলার।

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাইকেল ওপেনহাইমার মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো গবেষণা সক্ষমতা তৈরি করতে ইউরোপকে কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হবে।

আশা করা হচ্ছে, ইউরোপের এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন গবেষণা ও উদ্ভাবনে সহায়তা করবে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর আসা চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *