ইউরোপে নখের জেল পলিশে ব্যবহৃত একটি রাসায়নিকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি নখ সুন্দর করার পণ্য ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union – EU) সম্প্রতি এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মূলত, জেল পলিশে ‘ট্রাইমিথাইলবেনজয়িল ডাইফিনাইলফসফিন অক্সাইড’ (Trimethylbenzoyl diphenylphosphine oxide – TPO) নামক রাসায়নিকটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশন এটিকে প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। টিপিও (TPO) আলোর সংস্পর্শে আসলে বিক্রিয়া ঘটায়, যা জেল পলিশকে শক্ত করতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রাসায়নিকটি মূলত নখ তৈরি করার সেলুনে ব্যবহৃত হয়, যেখানে অতিবেগুনি রশ্মি (UV) যুক্ত ল্যাম্পের মাধ্যমে জেল পলিশ শুকানো হয়।
উদ্বেগের বিষয় হলো, টিপিও (TPO) যুক্ত পণ্য ব্যবহার করলে, বিশেষ করে যারা নিয়মিত সেলুনে যান, তাদের শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রাণীদেহে করা কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে, টিপিও (TPO) শুক্রাশয়ের কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
তবে, যারা নিয়মিত জেল পলিশ ব্যবহার করেন, তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
কারণ, নখের উপর এই পলিশ ব্যবহারের পদ্ধতি এবং টিপিও-র শরীরে প্রবেশ করার ধরন ভিন্ন। সাধারণত, নখ পালিশ খাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
বাজারে টিপিও (TPO) মুক্ত বিকল্পও পাওয়া যাচ্ছে। অনেক কোম্পানি ইতিমধ্যেই এই রাসায়নিক ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউরোপের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে টিপিও (TPO) যুক্ত পণ্য বিক্রি, সরবরাহ এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বর্তমানে বাজারে থাকা এই রাসায়নিক যুক্ত পণ্যগুলোও সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর থেকে যুক্তরাজ্যেও (UK) একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (United States) এখনো পর্যন্ত টিপিও (TPO) নিষিদ্ধ করা হয়নি।
তবে, সেখানেও রাজ্য পর্যায়ে এই ধরনের পদক্ষেপ আসতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়া ২০২৩ সালে বেশ কিছু প্রসাধনীতে ব্যবহৃত ২৬টি রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
এই প্রসঙ্গে কসমেটিক রসায়নবিদ কেলি ডবসের (Kelly Dobos) মতে, “বর্তমানে বাজারে টিপিও (TPO) মুক্ত অনেক বিকল্প রয়েছে।
তাই, সেলুনে গেলে ব্যবহৃত পণ্যের উপাদান সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো। এছাড়া, পুরনো দিনের নখ পালিশও ব্যবহার করা যেতে পারে, যা অনেক দিন ধরেই নিরাপদ হিসেবে পরিচিত।”
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
কারণ, অনেক প্রসাধনী পণ্য, যা আমরা ব্যবহার করি, তা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
তাই, ভোক্তাদের সচেতন থাকা উচিত এবং পণ্যের উপাদান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
আমাদের দেশেও অনেক নখ বিষয়ক সেলুন রয়েছে। তাই, এই ধরনের পদক্ষেপ আমাদের নখ এবং শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)