মার্কিন যুদ্ধবিমান: কেন বিকল্প খুঁজছে ইউরোপ ও কানাডা? চাঞ্চল্যকর তথ্য!

**যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান: নির্ভরশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ইউরোপ ও কানাডা**

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে ইউরোপ ও কানাডার কয়েকটি দেশ। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে তারা এখন বিকল্প পথের সন্ধান করছে। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতে তাদের জন্য কৌশলগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এরই মধ্যে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিল ব্লেয়ারকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলেছেন। উল্লেখ্য, কানাডা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে এই যুদ্ধবিমান তৈরির প্রকল্পে যুক্ত ছিল। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার পর কার্নি প্রতিরক্ষাখাতে দেশটির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছেন। এছাড়া, কানাডা ৬ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের বিনিময়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ একটি ব্যবস্থার চেয়ে আকারে ছোট হবে।

অন্যদিকে, পর্তুগালের বিদায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী দেশটির একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপের’ কারণে এফ-৩৫ বিমান কেনার বিষয়টি নতুন করে ভাবা হচ্ছে। পর্তুগাল তাদের পুরনো এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বিকল্প খুঁজছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিমান কেনার অর্থ শুধু একটি উড়োজাহাজ কেনা নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সম্পর্ক তৈরি করা। অতীতে অনেক দেশ এই সম্পর্ককে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সম্পর্কে পরিবর্তন আসতে পারে।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ে এখনো এফ-৩৫ প্রোগ্রামের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। তবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অনেক দেশই এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।

এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করে লকহিড মার্টিন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও বিশেষত্ব সম্পন্ন এই বিমানের দাম প্রায় ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ ধরলে প্রতিটি বিমানের মূল্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রায় ১১০০টি এফ-৩৫ বিমান সরবরাহ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যদিও জানানো হয়েছে, বিমানের কারিগরি ত্রুটি বা ‘ kill switch’-এর মতো কোনো বিষয় নেই, যা মিত্রদের সামরিক সক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে প্রযুক্তিগত আপগ্রেড পেতে সমস্যা হতে পারে, যা বিমানের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের নিজস্ব যুদ্ধবিমান তৈরির দিকে ঝুঁকছে। এক্ষেত্রে সুইডেনের তৈরি গ্রিপেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগে তৈরি ইউরোফাইটার টাইফুন এবং ফ্রান্সের ডাসল্ট রাফাল-এর মতো যুদ্ধবিমানগুলোর চাহিদা বাড়তে পারে। যদিও এফ-৩৫-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং ‘স্টেলথ’ ক্ষমতা এদের নেই।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁন এরই মধ্যে অন্য দেশগুলোকে ফরাসি যুদ্ধবিমান কেনার জন্য উৎসাহিত করছেন। যদি ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের উৎপাদন বাড়ায়, তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে লকহিড মার্টিনের মতো মার্কিন প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর ওপর।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *