আতঙ্কে ইউরোপ! ভয়াবহ বন্যা ও ঝড়ে ৪ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত!

শিরোনাম: ২০২৪ সালে ইউরোপে বন্যা ও ঝড়ে বিপর্যস্ত, জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি সংকেত

গত বছর ইউরোপে মারাত্মক বন্যা ও ঝড়ের কারণে চার লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কার্বন নিঃসরণের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন বেড়ে যাওয়ায় মহাদেশটিতে তীব্র গরম অনুভূত হয়, যা আবহাওয়ার চরম রূপের কারণ হয়েছে। ইউরোপের এই পরিস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতাকেই তুলে ধরে, যা বাংলাদেশের জন্যও একটি গুরুতর সতর্কবার্তা।

২০২৪ সালে ইউরোপের আবহাওয়ার চিত্র ছিল উদ্বেগজনক। বিশেষ করে মধ্য ইউরোপ এবং স্পেনে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়, যা বহু মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। ইউরোপের নদীগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশে ‘উচ্চ’ এবং ১২ শতাংশে ‘ভয়াবহ’ বন্যার সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে দীর্ঘ সময় ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা যায়।

জুলাই মাসে সেখানকার অর্ধেক অঞ্চলের মানুষ ১৩ দিন ধরে অসহনীয় গরমের শিকার হয়। এর ফলস্বরূপ, ব্যাপক দাবানল দেখা দেয়, যা প্রায় ৪২ হাজার মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পর্তুগালে এক সপ্তাহেরও কম সময়ে এক লক্ষ হেক্টরের বেশি বনভূমি পুড়ে যায়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও বাড়বে। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মেঘ আরও বেশি বৃষ্টি ঝরায়, যা বন্যার কারণ হয়। বর্তমানে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি, যা ২১০০ সাল নাগাদ ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে পারে।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে স্পেন ও পর্তুগালের মতো ভয়াবহতা আরও বাড়বে।

ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং স্বালবার্ডে হিমবাহগুলো দ্রুত গলতে শুরু করেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি ভয়ঙ্কর চিত্র। আর্কটিক অঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায় তাপমাত্রা ছিল রেকর্ড পরিমাণে বেশি। ভূমধ্যসাগরেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা ছিল সর্বোচ্চ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপের এই চরম আবহাওয়ার সরাসরি প্রভাব পড়ছে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের ওপর। একইসঙ্গে, এটি বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার ধরনেও পরিবর্তন আনছে। ইউরোপ যদিও অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে, তবুও পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও অনেক কিছু করার আছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। একইসঙ্গে ২০৪০ সালের মধ্যে তারা তাদের নির্গমন ৯০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারে।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং তাদের দূষণ সৃষ্টিকারী ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।

ইউরোপের এই অভিজ্ঞতা আমাদের সতর্ক করে যে জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশকে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হলে, কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি আরও জোরদার করতে হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *