ইউরোপের ঘরবাড়িতে কীটনাশকের উপস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণা চালানো হয়েছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানকার বাসাবাড়ির ধুলোয় প্রায় ২০০ ধরনের কীটনাশক মিশে আছে।
যা জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, কীটনাশকগুলি মিশ্রিত হয়ে এক ধরনের ‘বিষাক্ত ককটেল’ তৈরি করছে। এমনকি সামান্য পরিমাণে মিশ্রণও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তাই কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে, রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং মিশ্রণের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। কীটনাশক ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার আগে, বিদ্যমান এবং নতুন উভয় ধরনের রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ পরীক্ষা করা দরকার।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরোপের ১০টি দেশের বাসাবাড়ির ধুলা থেকে কীটনাশকগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কীটনাশকগুলোর মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি ক্যান্সার এবং হরমোন-সংক্রান্ত জটিলতার মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
প্রতিটি বাড়িতে ২৫ থেকে ১২১ পর্যন্ত কীটনাশক পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি কীটনাশক পাওয়া গেছে কৃষক পরিবারগুলোর বাড়িতে।
গবেষণার প্রধান, রেডবাউড ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক পল স্খিপার্স বলেন, “আমরা অনেক গবেষণায় দেখেছি, কীটনাশকের মিশ্রণ বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।” তিনি আরও জানান, মানুষের জুতা, পোষা প্রাণী এবং ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্যের মাধ্যমে কীটনাশকগুলো ঘরে প্রবেশ করে।
বাইরের ময়লা, পোষা প্রাণীর শরীরে লেগে থাকা কীটনাশক এবং দোকানে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন পণ্যের মাধ্যমেও এটি আসতে পারে। বিশেষ করে পোষা প্রাণীর উকুন ও টিক মারার ওষুধ থেকে এটি ছড়ানোর সম্ভবনা রয়েছে।
যদিও ঘরবাড়ির ধুলায় কীটনাশকের পরিমাণ খুব সামান্য, তবে এদের মিশ্রণ স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া ফল, সবজি ও ফুলের মাধ্যমেও মানুষ কীটনাশকের সংস্পর্শে আসে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ডিডিটি (DDT)-এর মতো কিছু কীটনাশক, যা একসময় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেগুলো এখনো পরিবেশে বিদ্যমান।
অধ্যাপক স্খিপার্স সতর্ক করে বলেন, “যেসব রাসায়নিক পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায় এবং সহজে ধ্বংস হয় না, সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশে মিশে থাকে। ডিডিটির ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে। এখন ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ হিসেবে পরিচিত পিএফএএস (PFAS)-এর ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে।” পিএফএএস বিভিন্ন শিল্প ও ভোক্তা পণ্যে ব্যবহৃত হয় এবং এটি ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, তাদের গবেষণার ফলে পরিবেশের কীটনাশকের মিশ্রণ সম্পর্কে জানা গেছে। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য তৈরি করা কীটনাশকগুলির পরীক্ষা করতে পারবে। এছাড়া পুরোনো কীটনাশকের সঙ্গে নতুন কীটনাশকের পারস্পরিক সম্পর্কও বিবেচনা করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান