যুদ্ধকালে রাশিয়ার গ্যাস: ইউরোপের অর্থায়নে বিতর্ক!

ইউরোপ এখনও রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি করছে, যা যুদ্ধের বাজারে দেশটির অর্থনীতিকে সাহায্য করছে – এমনটাই উঠে এসেছে এক নতুন প্রতিবেদনে।

অন্যদিকে যখন ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য পাঠানো হচ্ছে, তখন রাশিয়ার গ্যাস কেনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘এম্বার’ নামক একটি গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়া থেকে ২ হাজার ১৯০ কোটি ইউরোর গ্যাস কিনেছে।

যেখানে ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৮৭০ কোটি ইউরো।

এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইউরোপীয় দেশগুলো কেন এখনো গ্যাস কিনছে, তার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে।

তাদের মতে, রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি কমানোর বদলে বরং বেড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা ইউরোপের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অফিসের এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি নিয়ে কিয়েভ অসন্তুষ্ট।

তাঁর মতে, রাশিয়ার আগ্রাসনকে রুখতে হলে অবশ্যই এই ‘পেট্রোডলারের’ প্রবাহ বন্ধ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাসের আমদানি বেড়েছে এবং ২০২৫ সালেও তা আরও বাড়বে।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সেই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না।

তবে এই প্রেক্ষাপটে অন্য একটি চিত্রও উঠে আসছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে, ২০১৯ সালে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাসের সরবরাহ ছিল সর্বোচ্চ, প্রায় ১৭৯ বিলিয়ন ঘনমিটার।

যুদ্ধের কারণে, এই সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

এমনকি ২০২৪ সালে তা মাত্র ৩১ বিলিয়ন ঘনমিটারে নেমে এসেছে।

বর্তমানে, রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের একমাত্র পথ হলো ‘তুর্কস্ট্রিম’ পাইপলাইন।

তবে এর ক্ষমতা সীমিত।

এই পরিস্থিতিতে অনেকে মনে করছেন, যুদ্ধ শেষ হলে অথবা শান্তি চুক্তি হলে, রাশিয়ার পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ আবার শুরু হতে পারে।

সেই সঙ্গে রাশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করারও সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে, এই প্রক্রিয়াটি সহজ হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাইপলাইন মেরামতের জন্য প্রয়োজন হবে বিপুল অর্থ, সেই সঙ্গে বাতিল করতে হবে পারস্পরিক নিষেধাজ্ঞা।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমানোর চেষ্টা করছে।

২০২২ সালে, নিষেধাজ্ঞার আগে দেশটি রাশিয়া থেকে প্রায় ৮ কোটি ৮৪ লক্ষ টন তেল আমদানি করেছিল।

যদিও নিষেধাজ্ঞার পর গত বছরের শেষে এই আমদানি ৯০ শতাংশ কমেছে বলে জানা গেছে, তবে চোরাচালানের মাধ্যমে এখনো কিছু তেল আসছে।

অন্যদিকে, ইউক্রেন রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস থেকে উপার্জিত রাজস্ব বন্ধ করতে চাইছে।

তাদের ড্রোন হামলার মাধ্যমে রাশিয়ার বিভিন্ন তেল শোধনাগার এবং গ্যাস টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপের এই পরিস্থিতি সম্ভবত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফল।

তারা মনে করেন, রাশিয়া সব সময় প্রতিবেশী হিসেবে থাকবে, তাই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন করা কঠিন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *