যুদ্ধ বাড়ছে? প্রতিরক্ষা খাতে রেকর্ড বৃদ্ধি, ঘুম ভাঙছে ইউরোপের!

ইউরোপে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি: বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সামরিক ব্যয়ের নতুন এক প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করছে। স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ইউরোপের সামরিক ব্যয় ১৭ শতাংশ বেড়েছে, যা বিশ্বে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিয়েছে।

এই ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হলো ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর ফলে নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে জেগে ওঠা উদ্বেগ।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে ব্যয় ৯.৪ শতাংশ বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর সর্বোচ্চ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো, বিশেষ করে ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে।

জার্মানির মতো দেশগুলো তাদের সামরিক খাতে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানি সরকার একশ বিলিয়ন ইউরোর একটি বিশেষ তহবিল তৈরি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যয় বৃদ্ধির মূল কারণ হলো বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি পুনর্গঠন করা। তবে সামরিক সক্ষমতা তৈরি করতে দীর্ঘ সময় লাগে। সামরিক সরঞ্জাম তৈরি, জনবল তৈরি এবং তাদের প্রশিক্ষণ—এসব কিছুই সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।

এছাড়া, সামরিক খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও দেখা যায়, যা অনেক সময় অপচয় ডেকে আনে।

ইউক্রেন যুদ্ধ সামরিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাশিয়া তাদের সামরিক ব্যয় ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে, যেখানে ইউক্রেন তার মোট আয়ের প্রায় ৩৪ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) কিছু নিয়ম শিথিল করার ফলে সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিরক্ষা খাতে আরো বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ইউক্রেন সামরিক সহায়তা কমার কারণে ইউরোপের উপর এখন এই চাপ আরও বাড়তে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

এছাড়াও, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত বৈদেশিক সাহায্যও কমে যেতে পারে।

সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির এই প্রবণতা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তবে এর পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোরও সুযোগ রয়েছে।

তথ্য সূত্র: স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর প্রতিবেদন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *