রাশিয়ার তেল-গ্যাস বন্ধের পথে, বড় পদক্ষেপ ইউরোপের!

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের আমদানি নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো রুশ জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমানো এবং মস্কোকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করা।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইইউ-এর এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে জ্বালানি বাজারে, বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

ইইউ কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, রাশিয়ান গ্যাস আমদানি ধীরে ধীরে বন্ধ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নতুন চুক্তিগুলি আগামী বছর থেকে নিষিদ্ধ হবে, এবং বিদ্যমান স্বল্প-মেয়াদী চুক্তিগুলি ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিগুলি ২০২৭ সালের মধ্যে বাতিল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে তেল আমদানির ক্ষেত্রেও, যেখানে ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ান তেল আমদানি বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লিয়েন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “রাশিয়া বারবার তাদের জ্বালানি সরবরাহকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছে। আমরা রাশিয়ান জীবাশ্ম জ্বালানির যুগ শেষ করতে এবং এই নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছি।”

এই প্রস্তাবের অংশ হিসেবে, রাশিয়ার মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলিকে ইইউ-এর এলএনজি টার্মিনাল পরিষেবাগুলিতে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে স্বাক্ষর করতেও নিষেধ করা হবে। এর ফলে টার্মিনালগুলি বিকল্প সরবরাহকারীদের জন্য ব্যবহার করা সহজ হবে।

উল্লেখ্য, রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকেই ইইউ রাশিয়ার উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর ফলস্বরূপ, রাশিয়ার গ্যাস ও তেলের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে ইইউ-এর মোট গ্যাস আমদানির ৪৫ শতাংশ আসতো রাশিয়া থেকে, যা ২০২২ সালে ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সময়ে, রাশিয়ার তেলের আমদানিও কমেছে, যা ২০২২ সালের শুরুতে মোট আমদানির ২৭ শতাংশ ছিল, বর্তমানে তা মাত্র ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে, রাশিয়ান তেলের দামের সীমা ব্যারেল প্রতি $৬০ থেকে কমিয়ে $৪৫ করা হয়েছে। এছাড়াও, রাশিয়ার ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর সম্পূর্ণ লেনদেন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যারা বিদ্যমান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রাশিয়াকে সহায়তা করে।

তবে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলি কার্যকর করতে ইইউ-এর সকল সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন। হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো কিছু দেশের তরফে ইতোমধ্যেই উদ্বেগের কথা শোনা গেছে।

এই দেশগুলি অতীতে রাশিয়ার উপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে। যদিও, ইইউ এই পরিকল্পনার পথে কোনো বাধা তৈরি হতে দিতে রাজি নয় এবং বাণিজ্য ও জ্বালানি সংক্রান্ত আইন ব্যবহার করে তাদের রাজি করানোর চেষ্টা করছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলির অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলি, যারা আমদানি করা জ্বালানির উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *