ইউরোপের প্রথম গবেষণা কেন্দ্র, যা আটলান্টিক অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিবন নিয়ে কাজ করবে, কর্নওয়ালে তৈরি হতে যাচ্ছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো, বিজ্ঞানীরা যেন এই কম পরিচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রটি নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করতে পারেন।
আমাদের সুন্দরবনের মতো, এই বনাঞ্চলও পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত জরুরি।
এই গবেষণা কেন্দ্রটি তৈরি করার মূল উদ্যোক্তা হলো ‘দ্য থাউজেন্ড ইয়ার ট্রাস্ট’ নামের একটি দাতব্য সংস্থা। তারা প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১০ কোটি টাকার সমান) সংগ্রহের জন্য অর্থ जुटाচ্ছে।
এই কেন্দ্রে ছাত্র, শিক্ষক এবং স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে, যার মাধ্যমে তারা আটলান্টিক অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিবন নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে।
কর্নিশের বোডমিন মুর-এ অবস্থিত ক্যাবিলার পুরনো একটি খামারবাড়িতে এই গবেষণা কেন্দ্রটি তৈরি করা হবে। জায়গাটি এই ধরনের বনের আবহাওয়ার সঙ্গে একদম মিলে যায়।
নরওয়ের বার্গেন থেকে পর্তুগালের ব্রাথা পর্যন্ত বিস্তৃত এই বনাঞ্চল, যা একসময় স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বিস্তৃত ছিল, ধীরে ধীরে ছোট হতে শুরু করে।
বর্তমানে পৃথিবীর মাত্র ১ শতাংশ ভূমি এই ধরনের বন দ্বারা আচ্ছাদিত, যা একে বিরল বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে অন্যতম করে তুলেছে।
এই গবেষণা কেন্দ্রের ধারণাটি মূলত এসেছে, গায় শ্রিউবসোলের লেখা ‘দ্য লস্ট রেইনফরেস্টস অফ ব্রিটেন’ নামক একটি বই থেকে।
এই বনের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এই প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালে ব্রিটিশ সরকার এই ধরনের বন রক্ষার জন্য গবেষণা খাতে প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে।
এই প্রকল্পের প্রধান উদ্যোক্তা, মার্লিন হ্যানবেরি-টেনিসন, যিনি ক্যাবিলা পরিচালনা করেন, তিনি জানান, গত বছর প্রায় ২০ জন মাস্টার্স-এর শিক্ষার্থী এখানে গবেষণা করেছেন।
তিনি আশা করছেন, এই বছর এই সংখ্যা আরও বাড়বে। গবেষণা কেন্দ্রটি তৈরি হয়ে গেলে আরও বেশি সংখ্যক বিজ্ঞানী এখানে কাজ করতে পারবেন।
গবেষণা কেন্দ্রের নকশা করা হয়েছে স্থানীয় কাঠ ব্যবহার করে। এখানে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য হোস্টেল, গবেষণাগার, ক্যান্টিন এবং আলোচনা করার জন্য একটি ছোট অ্যাম্ফিথিয়েটার তৈরি করা হবে।
মার্লিন হ্যানবেরি-টেনিসন মনে করেন, এই গবেষণা কেন্দ্রটি আটলান্টিক অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিবন রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাঁর মতে, “আমরা তখনই এই বনগুলিকে ভালোবাসতে পারব, যখন আমরা এদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানব।
আর বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাই আমাদের সেই জ্ঞান দেবে।”
মার্লিনের বাবা, রবিন হ্যানবেরি-টেনিসন, একজন বিখ্যাত অভিযাত্রী। তিনি তাঁর ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিশেষ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন, যার মাধ্যমে এই গবেষণা কেন্দ্রের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হবে।
বৃষ্টিবনগুলি পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত। তাই, এই ধরনের বনের সংরক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সুন্দরবনের মতো আমাদের দেশের বনগুলিও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণা কেন্দ্রটি তৈরি হলে, বন এবং পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, যা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান