ইউরোপ ভ্রমণে যাওয়ার আগে, কিভাবে আপনার লাগেজ তৈরি করবেন, সেই বিষয়ে কিছু জরুরি পরামর্শ নিয়ে এসেছি আমরা। বিশেষ করে যারা প্রথমবার ইউরোপ ভ্রমণে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এই টিপসগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
অনেক সময় আমরা ভ্রমণের সময় এমন কিছু ভুল করি, যা আমাদের ভ্রমণকে কঠিন করে তোলে। আসুন, জেনে নিই ইউরোপ ভ্রমণের জন্য কি কি জিনিস সাথে নেওয়া উচিত, আর কোন জিনিসগুলো এড়িয়ে চলা ভালো।
প্রথমেই আসা যাক জুতার কথায়। ইউরোপের শহরগুলোতে হাঁটাচলার সুবিধার জন্য আরামদায়ক স্নিকার্স-এর জুড়ি মেলা ভার।
সেখানে কোবলস্টোনের রাস্তাগুলোতে হিল পরে হাঁটা বেশ কষ্টকর। তাই, আরামদায়ক স্নিকার্স-এর বিকল্প নেই।
বাংলাদেশেও এখন অনেক ভালো মানের স্নিকার্স পাওয়া যায়, যা ইউরোপের পরিবেশের সাথে মানানসই।
এরপর লাগেজের কথা বলতে হয়। ইউরোপে ভ্রমণের সময় চার চাকার স্যুটকেসের বদলে দু’চাকার ব্যাগ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
কারণ, সেখানকার রাস্তা সবসময় মসৃণ নাও হতে পারে। পুরনো রাস্তা বা পাথরের রাস্তায় চার চাকার ব্যাগ টানতে অসুবিধা হতে পারে।
এছাড়াও, ব্যাগের ওজন যেন খুব বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা ভালো। অনেক সময় হোটেলের কাছে চার্চ বা অন্য কোনো শব্দ সৃষ্টিকারী স্থান থাকতে পারে।
তাই, ভ্রমণের সময় কানের প্লাগ সঙ্গে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোর মতো শব্দ থেকে বাঁচতে এটা খুবই কাজে আসে।
শহরের মধ্যে ঘোরাঘুরির জন্য ব্যাকপ্যাকের বদলে একটি ক্রস-বডি ব্যাগ ব্যবহার করা ভালো। ব্যাকপ্যাক ব্যবহার করলে জিনিসপত্র চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ক্রস-বডি ব্যাগ নিরাপদ এবং সহজে বহনযোগ্য। পাসপোর্ট, ক্রেডিট কার্ড ও প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র রাখার জন্য এই ব্যাগ খুবই উপযোগী।
কাপড়ের ক্ষেত্রে, খুব বেশি ভারী কোট নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ইউরোপের আবহাওয়া সাধারণত হালকা থাকে।
শীতকালে একটি ভালো মানের ব্লেজার, যা সব ধরনের অনুষ্ঠানে পরা যেতে পারে, সেটাই যথেষ্ট। ব্লেজার সব সময়ের জন্য উপযুক্ত এবং হালকা হওয়ায় এটি বহনেও সুবিধা।
পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরামের দিকে নজর রাখতে হবে। ইউরোপের শহরগুলোতে স্মার্ট ক্যাজুয়াল পোশাকের চল বেশি।
খুব বেশি টাইট বা আকর্ষণীয় পোশাক এড়িয়ে চলা ভালো। আরামদায়ক প্যান্ট ও শার্ট এক্ষেত্রে সেরা।
শব্দ-নিরোধক ইয়ারফোন প্লেনে ভ্রমণের সময় কাজে লাগলেও, শহরের মধ্যে ঘোরাঘুরির সময় এটি ব্যবহার না করাই ভালো। এতে চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কঠিন হতে পারে।
এক্ষেত্রে শব্দ কমানোর সুবিধা আছে এমন ইয়ারফোন ব্যবহার করা যেতে পারে, যা বাইরের শব্দ কমাতে সাহায্য করবে।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চার্জ করার জন্য মাল্টিপ্লাগ অ্যাডাপ্টার নেওয়া জরুরি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইলেকট্রনিক গ্যাজেট চার্জ করার জন্য ভিন্ন ধরনের প্লাগ ব্যবহার করা হয়।
মাল্টিপ্লাগ অ্যাডাপ্টার থাকলে, যেকোনো দেশে চার্জ দেওয়া সহজ হয়।
কাপড় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য কম্প্রেশন প্যাকিং কিউব ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ব্যাগের জায়গা সাশ্রয় হয় এবং জিনিসপত্র গোছানো থাকে।
ভ্রমণে অতিরিক্ত পোশাক নেওয়া এড়িয়ে চলুন। কয়েকটি পোশাক নিন যা সহজে মিশিয়ে পরা যায়।
এতে আপনার ভ্রমণের সময় পোশাক নিয়ে বেশি ভাবতে হবে না।
জুতার মতো, হিল যুক্ত জুতা ইউরোপে খুব একটা দেখা যায় না। সেখানে ফ্ল্যাট জুতা বা আরামদায়ক স্নিকার্স-এর চল বেশি।
বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে একটি ছোট ছাতা সাথে রাখা ভালো। ইউরোপের আবহাওয়া পরিবর্তনশীল হতে পারে, তাই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাতা কাজে আসে।
মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার জন্য একটি পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা অপরিহার্য। ভ্রমণের সময় নেভিগেশন, টিকিট বুকিং এবং অন্যান্য কাজের জন্য মোবাইল ফোনের চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
পাওয়ার ব্যাংক থাকলে, চার্জের চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চুলের জন্য হেয়ার ড্রায়ারের বদলে, ট্রাভেল-ফ্রেন্ডলি কার্লিং আয়রন বা ফ্ল্যাট আয়রন নিতে পারেন।
অবশেষে, ভ্রমণের সময় কিছু বই বা স্কেচবুক সঙ্গে রাখা যেতে পারে। এতে ভ্রমণের একঘেয়েমি দূর হয় এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করে।
ভ্রমণের আগে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে, আপনার ইউরোপ ভ্রমণ আরও আনন্দদায়ক হবে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার