মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইইউ’র শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন এরই মধ্যে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির মতো পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন der Leyen বলেছেন, “আমরা এই সংঘাতের সূচনা করিনি।
প্রতিশোধ নেওয়ারও কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই, তবে প্রয়োজন হলে, আমাদের একটি শক্তিশালী পরিকল্পনা রয়েছে এবং আমরা তা ব্যবহার করব।”
হোয়াইট হাউজের তৎকালীন প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, ট্রাম্প বুধবার তাঁর শুল্ক পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন।
যদিও তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি, তবে ট্রাম্পের পূর্বের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে তিনি বলেছিলেন যে অন্যান্য দেশের শুল্কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন der Leyen আরও জানান, ইউরোপ আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেন, “আমরা একটি শক্তিশালী অবস্থান থেকে এই আলোচনায় অংশ নেব। বাণিজ্য থেকে প্রযুক্তি, আমাদের বাজারের আকার – ইউরোপের হাতে অনেক কিছুই রয়েছে।
তবে প্রয়োজনে দৃঢ় পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতিও আমাদের রয়েছে।”
আগে থেকেই অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে।
ট্রাম্পের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় তারা ২৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমেরিকান পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছে।
এর মধ্যে ছিল নৌকা, বার্বন এবং মোটরসাইকেলের মতো পণ্য।
এছাড়াও, ইউরোপীয় কমিশন একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে পরিচিত।
অতীতে তারা বৃহৎ মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর জরিমানা করেছে।
ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে তিনি এমন দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, যারা আমেরিকান উদ্ভাবকদের ওপর “অন্যায় জরিমানা” আরোপ করে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় বাজার। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম পণ্য আমদানিকারক।
উভয় পক্ষের জন্যই এই বাণিজ্য বিরোধের বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে উরসুলা ভন der Leyen উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
তিনি আরও জানান, এই বাণিজ্যের ওপর সরাসরিভাবে ১ মিলিয়ন আমেরিকান কর্মসংস্থান নির্ভরশীল।
বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ দুই অংশীদারের মধ্যেকার বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, যার প্রভাব পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি হলে, তা আমাদের রপ্তানি, আমদানি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন