স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো, বিশেষ করে সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ড, তাদের উন্নত জীবনযাত্রার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন সূচকে এই দেশগুলো জীবনযাত্রার মান, পাসপোর্ট সূচক এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে।
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাদের শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা, যা নাগরিকদের উন্নত জীবন দিতে সহায়ক।
গ্লোবাল সিটিজেন সলিউশনস (GCS) এর প্রকাশিত গ্লোবাল পাসপোর্ট ইনডেক্স-২০২৪ অনুযায়ী, সুইডেন এক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে, যেখানে ডেনমার্কের অবস্থান অষ্টম এবং নরওয়ের স্থান দশম। শুধু পাসপোর্ট সূচকে নয়, জীবনযাত্রার মানের দিক থেকেও এই দেশগুলো শীর্ষ ১০-এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
এক্ষেত্রেও সুইডেন প্রথম, ডেনমার্ক চতুর্থ এবং নরওয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে। ফিনল্যান্ড, যদিও ভৌগোলিকভাবে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার প্রতিবেশী, জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর এই সাফল্যের মূল কারণ হলো তাদের ‘জন-বান্ধব’ নীতি। এখানে নাগরিকদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।
এছাড়াও, পরিবার-বান্ধব নীতি, যেমন দীর্ঘকালীন প্যারেন্টাল লিভ-এর ব্যবস্থা, কর্মজীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। সুইডেনে এই ছুটি বাবা-মা উভয়ই ভাগ করে নিতে পারেন।
এই দেশগুলোতে উচ্চ হারে কর আরোপ করা হলেও, ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করার মাধ্যমে আয়ের বৈষম্য কমানো হয়। এর ফলে, নাগরিকদের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, যেমন – পেনশন, স্বাস্থ্যসেবা এবং সন্তানদের শিক্ষা।
নারীদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সুইডেন, নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ডে রাজনীতিতে নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ রয়েছে, যা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ডেনমার্ক ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৭০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
সুইডেন ২০৪৫ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষ হওয়ার পরিকল্পনা করছে এবং নরওয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে একই লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের বিশাল বনভূমি এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।
এমনকি, শহরগুলোতে বসবাসকারীরাও সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান, যেখানে স্টকহোম এবং অসলোর মতো শহরগুলো গ্রিন সিটি ইনডেক্সে শীর্ষ ১০-এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
এছাড়াও, এই দেশগুলোতে বসবাসকারী সকল বৈধ নাগরিক, এমনকি যারা এখানকার নাগরিক নন, তারাও বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সুবিধা পান।
পাসপোর্ট-এর ক্ষমতা বিচার করলে দেখা যায়, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই ১২৮টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। ডেনমার্কের নাগরিকরা ১২৭টি এবং নরওয়ের নাগরিকরা ১২৪টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন।
মোটকথা, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো উন্নত জীবনযাত্রার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাদের সামাজিক সুরক্ষা, পরিবেশ সচেতনতা এবং লিঙ্গ সমতা—এগুলো তাদের সাফল্যের চাবিকাঠি।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার