যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকিকে কারণ দেখিয়ে পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। দেশগুলো হলো ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া এবং লিথুয়ানিয়া। খবরটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, কারণ ল্যান্ডমাইন বা স্থলমাইন একটি বিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবে পরিচিত।
এই দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সীমান্ত রক্ষা করার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে চাইছে। তারা মনে করে, স্থলমাইন ব্যবহারের স্বাধীনতা তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই পদক্ষেপ আত্মঘাতী হতে পারে, কারণ, ল্যান্ডমাইন বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।
১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত অটোয়া চুক্তি অনুযায়ী, ল্যান্ডমাইন তৈরি, মজুত ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। চুক্তিটি ঠান্ডা যুদ্ধের পর অস্ত্র হ্রাস করার বৈশ্বিক প্রচেষ্টার অংশ ছিল। এই চুক্তির ফলে বিশ্বে মাইন ব্যবহারের কারণে হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছিল।
কিন্তু এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, দেশগুলো তাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নতুন করে বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে।
ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়া পুরো ইউরোপের জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি স্বরূপ। অটোয়া চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ফলে তারা নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে।
বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো মনে করে, রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হবে, সেই বিষয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ল্যান্ডমাইন সৈন্যদের অগ্রযাত্রা থামাতে এবং আক্রমণ প্রতিহত করতে কার্যকর হতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধেও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেখানে রাশিয়ার বাহিনী তাদের সীমান্তে মাইন স্থাপন করে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অগ্রগতি বহুলাংশে ব্যাহত করেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেন বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাইন দূষিত দেশ। ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার সেনারা দেশটির প্রায় ১ লক্ষ ৭৪ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা মাইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে। এর ফলে স্থানীয় বেসামরিক নাগরিকদের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
তারা তাদের জমি চাষ করতে পারছে না এবং স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মাইনগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঐ এলাকায় সক্রিয় থাকে এবং বেসামরিক মানুষের জন্য মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি করে। ২০১৮ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে ল্যান্ডমাইন ও বিস্ফোরক অস্ত্রের আঘাতে প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ হতাহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
তবে, এই দেশগুলো জানিয়েছে, তারা ল্যান্ডমাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানবিক নীতিগুলো মেনে চলবে। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছেন, তারা মাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ল্যান্ডমাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এর মধ্যে মাইনfield-এর সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করা, বেসামরিক নাগরিকদের সচেতন করা এবং সংঘাতের পর দ্রুত মাইন অপসারণ করা অন্যতম।
কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ উদ্বেগের কারণ। তাদের মতে, মাইনগুলো কোনো ভেদাভেদ করে না। এটি সামরিক সদস্য এবং বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তাই, ল্যান্ডমাইন ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে তারা অত্যন্ত নিন্দনীয় হিসেবে দেখছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন