ইউরোপের আশ্রয়প্রার্থী পরিকল্পনা ভেস্তে দিল আদালত!

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এই রায়ের ফলে ইতালির মতো দেশগুলোর অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে যারা সমুদ্রপথে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের অন্য দেশে ফেরত পাঠাতে চায় তাদের জন্য।

**আদালতের রায় এবং এর প্রভাব**

ইউরোপীয় বিচার আদালত (ইসিজে) সম্প্রতি এক রায়ে জানিয়েছে, ইতালি এখনো আলবেনিয়ার কিছু কেন্দ্রে আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠাতে পারবে। তবে, সেখানে তাদের পাঠানোর আগে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে, যাতে করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলে তারা কোনো ঝুঁকির মধ্যে না পড়েন।

আদালত আরও বলেছে, কোনো দেশকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে বিবেচনা করতে হলে, সেখানে বসবাস করা সকলের জন্য, বিশেষ করে দুর্বল এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এই রায়টি সম্ভবত আগামী জুন মাস থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন ইইউ আশ্রয় আইনের ওপর প্রভাব ফেলবে। নতুন আইনে সদস্য দেশগুলোকে দ্রুত আশ্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নিজেদের ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকা তৈরি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আপত্তির সত্ত্বেও, ইইউর খসড়া তালিকায় বাংলাদেশ, কলম্বিয়া, মিশর, ভারত, কসোভো, মরক্কো এবং তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলোর নাম রয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। তাদের মতে, যে দেশগুলোতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত আশ্রয় আবেদনকারীর সুরক্ষা মঞ্জুর করা হয়, সেই দেশগুলোকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।

**বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট**

আদালতের এই রায়ের একটি বড় কারণ ছিল, আলবেনিয়ায় আটক হওয়া দুইজন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীর একটি মামলা। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।

বর্তমানে ইতালির ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে আটক কয়েকজন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ভবিষ্যৎও এই রায়ের ওপর নির্ভরশীল।

ইতালির এই ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রকল্পের জন্য ইতালিকে প্রায় ৭ কোটি ৪২ লাখ ইউরোর বেশি খরচ করতে হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ৮০০ কোটি টাকার বেশি।

বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্পটিকে ইতালির অভিবাসন নীতির ইতিহাসে ‘সবচেয়ে ব্যয়বহুল, অমানবিক এবং অকার্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

অন্যদিকে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আদালতের এই রায়ের সমালোচনা করে একে ‘স্বল্প-দৃষ্টিভঙ্গির’ পরিচয় দিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের নীতি দুর্বল হবে বলে মন্তব্য করেছেন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *