ইউরোপের তিনটি দেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রোমানিয়া, পোল্যান্ড এবং পর্তুগালে অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচনে একদিকে যেমন কট্টর-ডানপন্থী শক্তির উত্থান নিয়ে আশঙ্কা ছিল, তেমনই কেন্দ্রপন্থী দলগুলোও তাদের সমর্থন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এই নির্বাচনগুলোতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল এসেছে, যা ইউরোপীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মধ্যপন্থী প্রার্থী নিকুসোর ড্যান জয়লাভ করেছেন। তিনি ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, যেখানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, জাতীয়তাবাদী জর্জ সিমিয়ন পেয়েছেন ৪৬ শতাংশ ভোট।
এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল বিগত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা প্রায় ৬৫ শতাংশ। বুখারেস্টের মেয়র ড্যান দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং ইইউ ও ন্যাটোর প্রতি সমর্থন জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা ভোটারদের আকৃষ্ট করেছে।
অন্যদিকে, সিমিয়ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিরোধী এবং জাতীয়তাবাদী বক্তব্য দিয়ে ভোটারদের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করেন।
পোল্যান্ডের নির্বাচনে, প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের নেতৃত্বাধীন মধ্যপন্থী সিভিক প্ল্যাটফর্ম পার্টির রাফাল ট্রাসকোওস্কি ৩১.১ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তবে, রক্ষণশীল ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির ক্যারল নাওরোকি ২৯.১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় আগামী ১ জুন তাদের মধ্যে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনটি মূলত টাস্ক সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন যাচাইয়ের একটি প্রক্রিয়া ছিল।
পর্তুগালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মধ্য-ডানপন্থী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এডি) জয়লাভ করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনেগ্রোর দল ৮৯টি আসন পেয়েছে, যা সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১১৬ আসনের চেয়ে অনেক কম।
সমাজতান্ত্রিক দল (পিএস) ও চরম-ডানপন্থী চেগা পার্টি উভয়েই সমান সংখ্যক, অর্থাৎ ৫৮টি করে আসন লাভ করেছে। তবে, চেগা পার্টির ভোট উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
তারা নির্বাচনে ২২.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে, যা তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়। মন্টেনেগ্রো যদিও চেগার সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন।
এই নির্বাচনগুলোর ফলাফল ইউরোপের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে। একদিকে, কেন্দ্রপন্থী দলগুলো তাদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
অন্যদিকে, চরম-ডানপন্থী দলগুলোর ক্রমবর্ধমান সমর্থন অনেক দেশে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্তুগালের নির্বাচনের ফল এই প্রবণতার একটি উদাহরণ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা