ইউক্রেন সংকট: ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য কিয়েভে ইউরোপীয় নেতাদের চাপ
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করতে দেশটির রাজধানী কিয়েভে পৌঁছেছেন ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডের শীর্ষ নেতারা। তারা রাশিয়ার প্রতি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন, যা এই দীর্ঘ সংঘাতে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবার (১১ই মে) ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ পোল্যান্ড থেকে ট্রেনে করে কিয়েভে পৌঁছান। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার জন্য তারা একত্রিত হন।
আলোচনা শেষে জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়ারমাক বলেন, “আমাদের অনেক কাজ করতে হবে, অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আমরা অবশ্যই একটি ন্যায়সঙ্গত শান্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধের সমাপ্তি চাই। মস্কোকে যুদ্ধবিরতি মানতে বাধ্য করতে হবে।”
এই সফরটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এই প্রথম ইউরোপের চারটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের প্রধানরা একসঙ্গে ইউক্রেন সফর করলেন। রাশিয়ার আগ্রাসনের তিন বছরের বেশি সময় পর ইউরোপীয় দেশগুলোর এই ঐক্যবদ্ধতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় উদযাপনের এক অনুষ্ঠানে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আলোচনায় জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত রাশিয়া এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। কিয়েভে উপস্থিত আল জাজিরার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, এই সফরটি প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে। এখানে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়টির পাশাপাশি, ভবিষ্যতে যেকোনো আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কীভাবে বজায় রাখা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি ইউরোপীয় বাহিনী গঠনের বিষয়ে অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করারও কথা রয়েছে।
নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “আমরা রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি— অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ ও শর্তহীনভাবে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে, যাতে একটি ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির জন্য আলোচনার পথ তৈরি হয়।” তারা আরও যোগ করেন, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব শান্তি আলোচনায় সমর্থন জানাতে প্রস্তুত। যুদ্ধবিরতির কারিগরি দিকগুলো নিয়ে আলোচনা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তির প্রস্তুতি নিতেও আমরা প্রস্তুত।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “রক্তক্ষয় বন্ধ করতে হবে। রাশিয়াকে তাদের অবৈধ আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। ইউক্রেনকে অবশ্যই তার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে একটি নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে উন্নতি লাভ করতে দিতে হবে।”
নেতারা ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, “যতদিন না রাশিয়া একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হচ্ছে, ততদিন আমরা রাশিয়ার যুদ্ধ মেশিনের উপর চাপ বাড়াতে থাকব।”
অন্যদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রাশিয়া যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগে ইউক্রেনের মিত্রদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। তিনি আরও যোগ করেন, বর্তমানে রুশ সেনারা “আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে” অগ্রসর হচ্ছে, তাই যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনের জন্য “সুবিধাজনক” হবে। তিনি এও জানান যে, ইউক্রেন “তৎক্ষণাৎ আলোচনার জন্য প্রস্তুত নয়।”
উল্লেখ্য, রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল দখল করে রেখেছে। এখন পর্যন্ত তারা যুদ্ধবিরতির আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			