ইউরোভিশন: বিতর্ক নাকি নতুনত্বের পথে? সোশ্যাল মিডিয়া কি সব শেষ করছে?

ইউরোভিশন: গানের মঞ্চে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব আর পরিবর্তনের ঢেউ।

ইউরোপের সবচেয়ে বড় সঙ্গীত প্রতিযোগিতা ‘ইউরোভিশন সং কন্টেস্ট’। প্রতি বছর এই আয়োজন বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি দর্শকের মন জয় করে।

গানের সুরের মূর্ছনার সাথে এখানে দেখা যায় বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি আর ভিন্নতার এক অপূর্ব মিশ্রণ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই প্রতিযোগিতায় এসেছে পরিবর্তন।

আর এই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হল সোশ্যাল মিডিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব।

আগে, ইউরোভিশন মানেই ছিল কিছু অপ্রত্যাশিত, মজাদার পরিবেশনা। কখনো দেখা যেত, মঞ্চে বাব ুষ্কা পরিহিত নর্তকীদের নাচ, আবার কখনো গরিলা সেজে কেউ স্টেজে উঠে আসত।

গান গাওয়ার মাঝে হিলিয়াম বেলুন থেকে শ্বাস নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু বর্তমানে, শিল্পী এবং গান প্রস্তুতকারকদের ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ অনেক বেড়েছে।

এখনকার দিনে, একজন প্রতিযোগীকে মাসের পর মাস ইন্টারনেট জগতে টিকে থাকতে হয়, একই সাথে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে, প্রতিযোগীদের জন্য নিজেদের এবং অন্যান্য গানের ভিন্ন সংস্করণ তৈরি করাও একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, এবারের ইউরোভিশনে অংশ নেওয়া লিথুয়ানিয়ার ‘কাতরসিস’ তাদের গানের একটি নতুন, আরও শক্তিশালী সংস্করণ পরিবেশন করেছে।

জর্জিয়ার শিল্পীগোষ্ঠী নেদারল্যান্ডসের একটি গানের কভার করেছে। এমনকি গ্রিসের একটি গান পরিবেশিত হয়েছে যেখানে একটি সুন্দর কুকুরছানা ভিডিওর আকর্ষণ বাড়িয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে গানের প্রচারণার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। গানের ভিউ এবং জনপ্রিয়তা এখন বাজি ধরার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে।

সুইডেনের ‘কেইএজেড’ তাদের গান ‘বারা বাদু বাস্টা’ দিয়ে এরই মধ্যে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে।

তবে, সোশ্যাল মিডিয়ার এই প্রভাব অনেক সময় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের গান নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি সতর্কতামূলক প্রবণতা তৈরি করেছে।

অনেক দেশ এখন নিরাপদ, নিরীহ গান বেছে নিচ্ছে। স্লোভেনিয়া, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ইসরায়েল এবং নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো গতানুগতিক ধারার গান নিয়ে এসেছে।

তবে, এই পরিবর্তনের মধ্যেও কিছু ব্যতিক্রমী পরিবেশনা এখনো দর্শকদের আনন্দ দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, মাল্টার ‘মিরিয়ানা কন্তে’র গান অথবা এস্তোনিয়ার ‘টমি ক্যাশ’-এর পরিবেশনা দর্শকদের হাসতে বাধ্য করে।

অস্ট্রেলিয়া একটি গানের মাধ্যমে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ উপস্থাপনা করেছে, যা দর্শকদের মাঝে বেশ আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

আসলে, ইউরোভিশন এখনো একটি বড় লাইভ ইভেন্ট, যা খেলাধুলার বাইরেও একসঙ্গে অনেক মানুষের কাছে উপভোগ করার সুযোগ তৈরি করে।

গত বছর ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ) এর তথ্য অনুযায়ী, এই প্রতিযোগিতার তিনটি লাইভ শো প্রায় ১৬ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ উপভোগ করেছে।

তবে, সবকিছু ছাপিয়ে, ইউরোভিশন এখনো তার পুরনো আকর্ষণ ধরে রেখেছে।

বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, গানের ভিন্নতা এবং অপ্রত্যাশিত পরিবেশনা এই প্রতিযোগিতার মূল আকর্ষণ।

সামনের দিনগুলোতেও, এই মঞ্চে নতুন নতুন চমক আশা করা যায়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *