ইউরোভিশন: সঙ্গীতের মঞ্চে সেন্সরশিপের লড়াই।
প্রতি বছর, ইউরোপের এই বিশাল সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় (Eurovision Song Contest) মিলিত হন বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা। কোটি কোটি দর্শকের মন জয় করতে চলে গান আর নাচের এক জমজমাট আসর।
তবে, গানের কথায় অশ্লীলতা বা আপত্তিকর শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রয়েছে কড়া নিয়ম। ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (European Broadcasting Union – EBU) এই প্রতিযোগিতার নীতিমালা তৈরি করে থাকে।
তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, এমন কিছু পরিবেশন করা যাবে না যা “অশ্লীল”, “জনগণের নৈতিকতা বা শালীনতার পরিপন্থী”।
কিন্তু শিল্পীরাও যে ছাড়ার পাত্র নন! গানের মধ্যে যৌনতা বা ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা খুঁজে বের করেন অভিনব পথ। সরাসরি কিছু না বলে, ইঙ্গিতের মাধ্যমে অথবা অন্য ভাষার আশ্রয় নিয়ে অনেক শিল্পীই সেন্সরশিপের বেড়াজাল টপকে যান।
উদাহরণস্বরূপ, এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ফিনল্যান্ডের একজন শিল্পী তাঁর গানে গেয়েছেন, “আমি আসছি!” আবার, অস্ট্রেলিয়ার একজন শিল্পী তাঁর গানে শ্রোতাদের “নাচতে” আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যেন তারা “মিল্কশেক ম্যান”-এর স্বাদ” উপভোগ করতে পারে।
এই বছর, সুইজারল্যান্ডের বেসেলে (Basel) অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রতিযোগিতায় মাল্টার শিল্পী মিরিয়ানা কন্তের গানটি ছিল বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তাঁর গানের শিরোনাম ছিল “Kant”, মাল্টীয় ভাষায় যার অর্থ “গান”।
কিন্তু ইংরেজি ভাষায় এই শব্দের উচ্চারণ একটি অত্যন্ত আপত্তিকর শব্দের কাছাকাছি, যা নারীদের যৌনাঙ্গকে বোঝায়।
ইবিইউ-এর আপত্তির কারণে গানটির শিরোনাম পরিবর্তন করে “Serving” করা হয়েছে।
শিল্পী মিরিয়ানা কন্তে জানান, তাঁর গানের মূল বার্তা ছিল, “নিজেকে ভালোবাসো, তুমি যেমনই হও না কেন।”
তবে, সব ভাষার ক্ষেত্রে কিন্তু এই নিয়ম একই রকমভাবে প্রযোজ্য নয়।
ইংরেজি ভাষার গানগুলোতে সেন্সরশিপের কড়াকড়ি অনেক বেশি।
বিশেষ করে, বিট্রিশ সম্প্রচার সংস্থা বিবিসি’র (BBC) নজরে থাকে, কারণ তারা শিশুদের জন্য উপযুক্ত কনটেন্ট পরিবেশন করতে চায়।
তাদের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা (watershed) রয়েছে, যার পরে তারা এমন কিছু বিষয় সম্প্রচার করে যা শিশুদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
ফলে, ইংরেজি গানের ক্ষেত্রে হয় ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করতে হয়, অথবা অন্য কোনো উপমা ব্যবহার করতে হয়।
অন্যান্য ভাষার শিল্পীরা এক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পান।
যেমন, জার্মান ভাষায় “আমি আসছি” (Ich komme) বলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি।
আবার, স্প্যানিশ ভাষায় “Zorra” (শাব্দিক অর্থে “শেয়াল” বা “বেয়াড়া”) শব্দটির ব্যবহারও তেমন কোনো বিতর্কের জন্ম দেয়নি।
২০২২ সালের প্রতিযোগিতায় লাটভিয়ার একটি ব্যান্ডের “Eat Your Salad” গানটিও বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।
গানটির মূল বিষয় ছিল নিরামিষ খাবার খাওয়ার প্রতি উৎসাহ দেওয়া।
তবে গানের কয়েকটি লাইনে একটি বিতর্কিত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল।
ইবিইউ-এর আপত্তির পর, লাইভ অনুষ্ঠানে শিল্পী সেই শব্দটি বাদ দিয়ে দর্শকদের সেটি বলার জন্য উৎসাহিত করেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, ভাষার ভিন্নতার কারণে অনেক সময় একটি শব্দ এক সংস্কৃতিতে স্বাভাবিক হলেও, অন্য সংস্কৃতিতে তা আপত্তিকর হতে পারে।
ইউরোভিশনের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাই শিল্পীদের নিজেদের সৃষ্টিশীলতা বজায় রেখে, সেন্সরশিপের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।