শিরোনাম: পরিবেশ দূষণের শিকার ইন্দোনেশিয়ার গ্রাম, দায়ী ইলেক্ট্রিক গাড়ির গুরুত্বপূর্ণ ধাতু সরবরাহকারী কোম্পানি
বৈদ্যুতিক গাড়ির (electric vehicle – EV) বাজারে গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ সরবরাহকারী ইন্দোনেশিয়ার একটি বৃহৎ কোম্পানি, স্থানীয় গ্রামবাসীদের পানীয় জলের দূষণ নিয়ে তথ্য গোপন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া কিছু নথি থেকে জানা যায়, কোম্পানিটি তাদের খনি প্রকল্পের কাছাকাছি এলাকার পানীয় জলের নিরাপত্তা সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। এই ঘটনায় পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে বিশ্বে নিকেল উৎপাদনের শীর্ষ স্থানে রয়েছে। নিকেল, সৌর প্যানেল, বায়ু টারবাইন এবং ইলেক্ট্রিক গাড়ির ব্যাটারি উৎপাদনে অপরিহার্য একটি উপাদান। তবে, দ্রুত খনি উন্নয়নের ফলে দেশটির পরিবেশগত দিকটি কতটা সুরক্ষিত থাকছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, হারিতা গ্রুপ নামক একটি ইন্দোনেশীয় কোম্পানির প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি খনি প্রকল্পের কাছে অবস্থিত কাওয়াসি গ্রামের (Kawasi) ঝর্ণার পানিতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান হেক্সাভ্যালেন্ট ক্রোমিয়াম (Cr6) -এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই Cr6-এর মাত্রা ছিল ইন্দোনেশিয়ার নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি। উল্লেখ্য, এই Cr6-এর কারণে লিভারের ক্ষতি, প্রজনন সমস্যা এবং শিশুদের বিকাশেও সমস্যা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘এরিন ব্রোকোভিচ’ (Erin Brockovich) নামক একটি মামলার কারণে হেক্সাভ্যালেন্ট ক্রোমিয়াম (Cr6) বিষয়টি সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। এখানে একজন আইনি সহকারী, কর্পোরেট দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
কাওয়াসি গ্রামের মানুষজন এই ঝর্ণার জল পান করে। *The Guardian* সহ অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের হাতে আসা নথিতে দেখা যায়, হারিতা গ্রুপের পরীক্ষায় ফেব্রুয়ারি ২০২২-এর শুরুতে পানির নমুনায় Cr6-এর ঘনত্ব ছিল ইন্দোনেশিয়ার মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। অথচ কোম্পানিটি এর আগে জানিয়েছিল যে, ঝর্ণার জল নিরাপদ।
এ বিষয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কর্মরত পরিবেশ বিষয়ক আইনজীবী ম্যাথিউ বেয়ার্ড (Matthew Baird) বলেন, “শুধু কোম্পানি নয়, ইন্দোনেশিয়া সরকারকেও এই বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। আমাদের পরিবেশ, মানবাধিকার ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় একটি উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
এই ঘটনার পর, পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জল দূষণের এই গুরুতর সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, দ্রুত শিল্পায়নের যুগে পরিবেশ সুরক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা দেখি, বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে আমাদের দেশেও মাঝে মাঝে নদীর পানি দূষিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ একটি পরিচিত উদাহরণ।
ইতোমধ্যে, হারিতা গ্রুপ এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে, তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি জানিয়েছে, কাওয়াসি ঝর্ণার জল নিরাপদ কিনা, তা নিয়মিতভাবে তারা পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
তথ্য সূত্র: *The Guardian*