এভারেস্ট জয় আরও সহজ? ড্রোন ব্যবহারের হাত ধরে নতুন দিগন্ত
পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করতে গিয়ে এবার হয়তো নতুন পথের সন্ধান মিলতে চলেছে। নেপালের এভারেস্টের দুর্গম পথে পর্বতারোহীদের সরঞ্জাম ও রসদ পৌঁছে দিতে ড্রোন ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে, আবহাওয়ার প্রতিকূলতা এবং কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমবে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এভারেস্টের বেস ক্যাম্প থেকে এক নম্বর ক্যাম্পে (Camp One) সরঞ্জাম ও রসদ সরবরাহ করার জন্য স্থানীয় ‘এয়ারলিফট টেকনোলজি’ নামের একটি সংস্থা কাজ শুরু করেছে। এই দুটি ক্যাম্পের মধ্যেকার আকাশপথের দূরত্ব প্রায় ১.৮ মাইল। যেখানে শেরপাদের এই পথ পাড়ি দিতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে ড্রোন ব্যবহার করে এই কাজটি মাত্র ৬-৭ মিনিটে করা সম্ভব হচ্ছে। এই প্রযুক্তির ফলে পর্বতারোহীদের জীবন আরও সুরক্ষিত হবে এবং শেরপাদের ঝুঁকিও কমবে।
এভারেস্টের খুম্বু হিমবাহ (Khumbu Icefall) বরাবর পথ তৈরি করা বেশ কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ। পর্বতারোহণের জন্য এই পথটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রুটে প্রায়ই বরফের বড় ফাটল দেখা যায়, যা বিপদ আরও বাড়িয়ে তোলে। এই কারণে, অনেক সময় শেরপারা জীবন হারান। জানা গেছে, ২০২৩ সালে তুষারধসে কয়েকজন শেরপার মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করাও সম্ভব হয়নি।
‘এয়ারলিফট টেকনোলজি’র কর্ণধার রাজ বিক্রম জানান, তাঁরা চীন থেকে আনা দুটি ড্রোনের সাহায্যে এই কাজ করছেন। প্রতিটি ড্রোনের ওজন প্রায় ৩০ কেজি। তবে নিরাপত্তা বিবেচনায় তারা একবার প্রায় ২০ কেজির মতো ওজন বহন করে। চলতি বছর তাঁরা একটি ড্রোন ব্যবহার করছেন এবং অন্যটি রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়েছে। এই ড্রোনের মাধ্যমে জরুরি ঔষধপত্র, অক্সিজেন সিলিন্ডার ইত্যাদি সরবরাহ করা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রযুক্তি শেরপাদের জীবন আরও সহজ করবে। কারণ, তাঁদের ভারী সরঞ্জাম কাঁধে নিয়ে বহুবার এই পথ অতিক্রম করতে হয়। এর ফলে তাঁদের শারীরিক ও মানসিক চাপ দুটোই বাড়ে। এছাড়া, খারাপ আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় পথ তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে। ড্রোনের ব্যবহারের ফলে দ্রুত সরঞ্জাম সরবরাহ করা যাবে, যা সময় ও শ্রম দুটোই বাঁচাবে।
তবে, এই প্রকল্পের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। একটি ড্রোনের দাম প্রায় ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়াও, দুর্গম অঞ্চলে ড্রোন পরিচালনা করা বেশ কঠিন। প্রতিকূল আবহাওয়া, উচ্চতা এবং তীব্র বাতাস এই কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তারপরও, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে এবং পর্বতারোহণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ পর্বতারোহী এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তাঁদের মতে, ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এভারেস্ট জয় আরও নিরাপদ ও সহজ হবে। তবে, তাঁরা এও মনে করেন, পর্বতারোহণের আসল চ্যালেঞ্জ বজায় থাকবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন