ইংল্যান্ডের একটি অনাবিষ্কৃত রত্ন: এক্সমুর ন্যাশনাল পার্ক।
যুক্তরাজ্যের এক্সমুর ন্যাশনাল পার্ক যেন প্রকৃতির এক অপার লীলাভূমি। উত্তর ডেভন ও পশ্চিম সোমারসেটের উপকূল এবং অরণ্যভূমি পরিবেষ্টিত এই পার্কটি এখনো অনেক ভ্রমণকারীর কাছে অজানা।
তবে যারা এখানে আসেন, তারা এর মনোমুগ্ধকর পরিবেশে মুগ্ধ হন। এখানকার বিশাল তৃণভূমি, সমুদ্রের কাছাকাছি খাড়া পাহাড়, ঘন বনভূমি এবং আদিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত এক্সমুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুণ।
ঐতিহাসিক নিদর্শনে ভরপুর:
এক্সমুরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথরের স্তম্ভ ও সমাধিস্থল। মধ্যযুগীয় বসতি ও চার্চের ধ্বংসাবশেষ আজও দেখা যায়, যা এই পার্কটিকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা।
এখানে কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কোলরিজ এবং শেলীর মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকদের পদচিহ্ন আজও খুঁজে পাওয়া যায়। এমনকি হোল্ডস্টোন ডাউনের মতো স্থান রয়েছে, যা একসময় ইউএফও-প্রেমীদের তীর্থস্থান ছিল।
আকাশ পর্যবেক্ষণের এক আদর্শ স্থান:
এক্সমুরের রাতের আকাশ এতটাই পরিষ্কার যে, এখানে তারার মেলা বসে। রাতের আকাশে আলো দূষণ খুবই কম থাকার কারণে, ২০১১ সালে এটিকে ইউরোপের প্রথম আন্তর্জাতিক ডার্ক স্কাই রিজার্ভ ঘোষণা করা হয়।
প্রতি বছর এখানে অনুষ্ঠিত হয় এক্সমুর ডার্ক স্কাই ফেস্টিভ্যাল। যারা সারা বছর ধরে আকাশ দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এখানে রয়েছে বিশেষ স্থান, যেখানে টেলিস্কোপ ভাড়া করে রাতের আকাশের তারা দেখা যায়।
হাইকিং এবং ট্রেকিং-এর স্বর্গ:
যারা হেঁটে প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এক্সমুর এক আদর্শ স্থান। এখানকার ৬৩০ মাইল দীর্ঘ সাউথ ওয়েস্ট কোস্ট পাথ-এর শুরু বা শেষের অংশটি এই পার্কের পাশ দিয়ে গেছে।
এছাড়া ৫১ মাইল দীর্ঘ কোলরিজ ওয়েও এখানে বিদ্যমান, যা রোমান্টিক কবিদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এখানকার ডানকেরি বীকন-এর (১,৭০২ ফুট) উপরে ওঠা এবং হর্নার উডের প্রাচীন ওক গাছের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া ট্রেকারদের জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা।
আরাম এবং খাবারের ঠিকানা:
এক্সমুরের বিভিন্ন পাব-এ বসে স্থানীয় বিয়ারের স্বাদ নেওয়া যেতে পারে। এখানকার ‘এক্সমুর ফরেস্ট ইন’-এ পাওয়া যায় তাজা বিয়ার, যা পর্যটকদের মন জয় করে।
এখানকার মেনুতে থাকে ঘাস-খাওয়া গরুর মাংসের মতো সুস্বাদু খাবার। এছাড়া, ‘উডস’ নামের একটি পাব ও রেস্টুরেন্টও বেশ জনপ্রিয়, যেখানে নানা ধরনের বিয়ার ও ওয়াইনের সম্ভার রয়েছে।
যারা ডেভন ক্রিম টি-এর স্বাদ নিতে চান, তারা ওয়াটারসমিট ক্যাফে অথবা লি অ্যাবে টি কটেজে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন:
এখানে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিকল্প রয়েছে। লোকান্ডা অন দ্য ওয়েইর-এর মতো সুন্দর হোটেলে আরামদায়ক পরিবেশে থাকার সুযোগ আছে, যেখানে স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি খাবার পরিবেশন করা হয়।
যারা সমুদ্রের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য ‘দ্য হান্টার্স ইন’ একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এছাড়া, রাতের আকাশ উপভোগ করার জন্য ‘রেস্ট + ওয়াইল্ড’-এর কটেজগুলোও বেশ জনপ্রিয়।
এখানে কটেজের বাইরের বাথটবে বসে তারার আলো উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে।
যদি আপনি প্রকৃতির নীরবতা ভালোবাসেন এবং কোলাহলমুক্ত পরিবেশে কিছু সময় কাটাতে চান, তাহলে এক্সমুর ন্যাশনাল পার্ক আপনার জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক