যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA)-এর প্রধান হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত ব্রায়ান বেডফোর্ডকে নিয়ে সিনেটরদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। বুধবার (১৫ মে) সিনেটে শুনানিতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পুরনো এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম এবং পাইলটদের প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।
সিনেট কমার্স, সায়েন্স অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন কমিটির শুনানিতে বেডফোর্ডকে দেশের বিমান চলাচল ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। উল্লেখ্য, বিদায়ী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইক হুইটেকারের পর থেকে এই পদে অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করছেন ক্রিস রোশেলিও।
আলোচনার মূল বিষয় ছিল নিরাপত্তা। সিনেটররা জানতে চান, নির্বাচিত হলে বেডফোর্ড কিভাবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। কারণ, গত ছয় মাসে বিমান চলাচলে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমেও দেখা দিয়েছে প্রযুক্তিগত ত্রুটি।
শুনানিতে বেডফোর্ড স্বীকার করেন, পুরনো এই সিস্টেমের কারণে কর্মীদের ওপর চাপ বাড়ছে এবং এর ফলে ফ্লাইট পরিচালনায় প্রায়ই বিলম্ব ও বাতিল হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, বিমান চলাচল ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা জরুরি। আমাদের সবার আগে জনসাধারণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।”
সিনেটররা নিউইয়র্কের নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমে ত্রুটি, সারাদেশে পুরনো এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল অবকাঠামো এবং ৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার এর অভাব সহ FAA-এর প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন গত জানুয়ারিতে ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ৬৭ জন যাত্রীর পরিবারের সদস্যরাও। ওই দুর্ঘটনায় একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সঙ্গে একটি বিমানের সংঘর্ষ হয়। বেডফোর্ড নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। তিনি জানান, এই দুর্ঘটনার তদন্তের স্বচ্ছতা আনা হবে।
কানসাসের রিপাবলিকান সিনেটর জেরি মরান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ADS-B নিয়ে আলোচনা করেন। বেডফোর্ড জানান, ADS-B ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
এদিকে, পাইলটদের প্রশিক্ষণ বিষয়ক একটি বিতর্কিত বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। নতুন পাইলটদের জন্য ১৫০০ ঘণ্টা উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের যে নিয়ম রয়েছে, বেডফোর্ড দীর্ঘদিন ধরে তার বিরোধিতা করে আসছেন। সিনেটর টামি ডাকওয়ার্থ বেডফোর্ডের কাছে জানতে চান, তিনি এই নিয়ম শিথিল করার কোনো পরিকল্পনা করছেন কিনা। জবাবে বেডফোর্ড সরাসরি হ্যাঁ বা না কিছুই বলেননি, তবে তিনি জানান, তার মূল মনোযোগ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমের সমস্যাগুলো সমাধানে। তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তার সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না।”
FAA-এর অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো পুরনো এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম। বর্তমানে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশক থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি নিউয়ার্ক বিমানবন্দরে কয়েক দফা প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছিল। এই সমস্যা সমাধানে FAA নতুন রাডার, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।
তবে, এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কংগ্রেস সরবরাহ করবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। সিনেটর জন হিকেনলুপার জানতে চান, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমের সমস্যা সমাধানে বেডফোর্ডের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা।
জবাবে বেডফোর্ড জানান, FAA-এর অভ্যন্তরে এবং অংশীদারদের মধ্যে আস্থার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।”
তথ্যসূত্র: CNN