যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। রিপাবলিকান দলের শীর্ষ নেতারা, যাদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও রয়েছেন, অভিযোগ করেছেন যে ডেমোক্র্যাটরা সম্প্রতি সরকারি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন, কারণ তারা অবৈধ অভিবাসীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে চান।
তবে, এই অভিযোগের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলো এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র নেই এমন অভিবাসীদের ফেডারেল স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ সীমিত।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হলো- ‘দ্য অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ (এসিএ), যা ‘ওবামাকেয়ার’ নামে পরিচিত এবং মেডিকেড। ডেমোক্র্যাটরা চাচ্ছেন, এই দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে পাওয়া সুবিধাগুলো বাড়ানো হোক।
মূলত, তারা এসিএর অধীনে স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামের ওপর ট্যাক্স ক্রেডিট বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এর ফলে, অনেক মার্কিন নাগরিক স্বাস্থ্য বীমা কিনতে সুবিধা পাবেন। এছাড়া, মেডিকেডের কিছু কাটছাঁট বাতিলের পক্ষেও তারা।
অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা বলছেন, ডেমোক্র্যাটদের এই পদক্ষেপের কারণেই সরকারের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বক্তব্যে বলেন, ডেমোক্র্যাটরা অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বিশাল স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা দিতে চান।
তিনি আরও যোগ করেন, এর ফলে দেশের অন্য নাগরিকদের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি হবে। রিপাবলিকান দলের অন্যান্য নেতারাও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।
তবে, ডেমোক্র্যাটরা এই অভিযোগকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের দাবি, তারা কেবল স্বাস্থ্যখাতের বিদ্যমান সুযোগগুলো বহাল রাখতে চাইছেন। সিনেটের ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার বলেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
বাস্তবতা হলো, অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা অভিবাসীরা এসিএ-এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য বীমা বা মেডিকেডের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন। মেডিকেডের সুবিধা পেতে হলে একজন ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকতে হবে অথবা বৈধভাবে এখানে বসবাস করতে হবে।
এছাড়াও, কিছু আর্থিক শর্তও পূরণ করতে হয়। তবে, জরুরি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলো মেডিকেড থেকে কিছু অর্থ পায়। এই সুবিধাটি তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা মেডিকেডের অন্য সব শর্ত পূরণ করেন, কিন্তু বৈধ অভিবাসী নন।
কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন (কেএফএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মেডিকেডের মোট ব্যয়ের ১ শতাংশেরও কম অর্থ জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি গবেষণা সংস্থা কেএফএফ-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ল্যারি লেভিট বলেন, ডেমোক্র্যাটরা অবৈধ অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে চায়- এমন কথা বলাটা আকর্ষণীয় হতে পারে, তবে তা সত্য নয়।
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সেন্টার অন হেলথ ইনস্যুরেন্স রিফর্মসের প্রতিষ্ঠাতা ও কো-ডিরেক্টর সাবরিনা কোলেট রিপাবলিকানদের এই দাবিকে ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, যদি কংগ্রেস এসিএর অধীনে ট্যাক্স ক্রেডিট বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন না করে, তাহলে লাখ লাখ মার্কিনির স্বাস্থ্য বীমার খরচ বেড়ে যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস