মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক সহযোগিতা এবং আর্থিক চুক্তির বিষয়ে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা কিছু মিথ্যা দাবির বিষয়ে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। ট্রাম্পের দাবি ছিল, দক্ষিণ কোরিয়া তার শাসনামলে সামরিক সুরক্ষার জন্য অর্থ প্রদান শুরু করে এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই চুক্তি বাতিল করেছেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্রাম্পের এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
আসলে, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এই ধরনের আর্থিক সহযোগিতার চুক্তি ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। উভয় দেশের মধ্যেকার এই বিশেষ ব্যবস্থা চুক্তি (Special Measures Agreements বা SMA) ১৯৯১ সাল থেকে বিদ্যমান। এই চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়া মার্কিন সামরিক উপস্থিতির খরচ বহন করে থাকে। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় ২৬,০০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন যে, বাইডেন প্রশাসন এই চুক্তি বাতিল করেছে। কিন্তু তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর, তিনি বরং এই চুক্তিগুলোকে আরও শক্তিশালী করেছেন। ট্রাম্পের আমলে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি ২০২১ সালে শেষ হয়ে গিয়েছিল।
বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর, ২০২১ এবং ২০২৪ সালে দুটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ আরও বাড়ানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই ধরনের মন্তব্য সম্পূর্ণ ভুল এবং বিভ্রান্তিকর। তারা বলছেন, বাইডেন প্রশাসন বরং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে উভয় দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে হওয়া একটি চুক্তি কার্যকর ছিল। এরপর ট্রাম্প ২০১৯ সালের জন্য এক বছরের একটি চুক্তি করেন, যেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক অবদান ৮.২% বৃদ্ধি পায়।
যদিও ট্রাম্প চেয়েছিলেন, এই খরচ আরও অনেক বাড়ানো হোক। তিনি প্রায় ৪০০% পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন, যা দক্ষিণ কোরিয়া প্রত্যাখ্যান করে।
২০২০ সালে, ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একটি ছোট চুক্তি করে, যার মাধ্যমে মার্কিন বাহিনীর দক্ষিণ কোরীয় কর্মীদের বেতন পরিশোধের জন্য দেশটিকে ২০০ মিলিয়ন ডলার দিতে হয়েছিল। তবে, নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনা তখনও অমীমাংসিত ছিল, যখন ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন।
অন্যদিকে, বাইডেন প্রশাসন ২০২১ সালে একটি নতুন চুক্তি করে, যা ২০২০ সাল থেকে কার্যকর হয় এবং ২০২৫ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। এরপর, ২০২৪ সালের শেষের দিকে, ২০২৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত মেয়াদে আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে, বাইডেন দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে প্রায় কিছুই আদায় করেননি। তবে বাস্তবে দেখা যায়, বাইডেনের সময়ে স্বাক্ষরিত উভয় চুক্তিতেই দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আর্থিক সহায়তা বাড়ানো হয়েছে।
২০২১ সালের চুক্তিতে, ওই বছরই ১৩.৯% অর্থ বাড়ানো হয়, যা প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের সমান ছিল। ২০২৪ সালের চুক্তিতেও ২০২৬ সাল থেকে বার্ষিক ৮.৩% হারে অর্থ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের চুক্তিগুলি উভয় দেশের মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।