যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসি-তে অপরাধের মাত্রা নিয়ে সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন, তার সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের করা অনেক দাবিই হয় অতিরঞ্জিত, না হয় ভুল তথ্য-নির্ভর।
খবরটি প্রকাশ করেছে ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’। ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেন যে, তার প্রশাসন ওয়াশিংটন ডিসি-র আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নেবে এবং এর মাধ্যমে শহরের ক্রমবর্ধমান অপরাধ কমানো হবে।
তবে, এই বিষয়ে তিনি যে তথ্য দিয়েছেন, তার অনেক কিছুই বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এমনকি, শহরের অপরাধের চিত্র নিয়ে তিনি ভুল তথ্য দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
ওয়াশিংটন ডিসি-র মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, ট্রাম্পের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছরে রাজধানীতে সহিংস অপরাধ কমেছে।
উদাহরণস্বরূপ, খুনের ঘটনা, ডাকাতি এবং চুরির মতো অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর সহিংস অপরাধের হার ২৬ শতাংশ কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সহিংস অপরাধের হার ৩৫ শতাংশ কমেছে। এই হিসাব অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ডিসি-তে গত ৩০ বছরের মধ্যে বর্তমানে অপরাধের হার সবচেয়ে কম।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় খুনের ঘটনা ৩২ শতাংশ, সশস্ত্র গাড়ি ছিনতাই ৫৩ শতাংশ এবং মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে হামলার ঘটনা ২৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
তবে, ওয়াশিংটন ডিসি-র অপরাধের পরিসংখ্যান নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা তথ্যের কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকতে পারে, যাতে পরিস্থিতি ভালো দেখানো যায়।
যদিও, মেয়র মুরিয়েল বাউজার তার তথ্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং ট্রাম্পের দেওয়া শহরের বিশৃঙ্খলার চিত্রকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা অপরাধের বৃদ্ধি দেখছি না। বরং, আমাদের অপরাধের সংখ্যা কমছে।”
ট্রাম্প আরও বলেছিলেন যে, ২০২৩ সালে ওয়াশিংটন ডিসি-তে খুনের সংখ্যা সম্ভবত সর্বোচ্চ ছিল। তবে, এই দাবিও সঠিক নয়। যদিও ২০২৩ সালে শহরটিতে ২৭৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছিল, যা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, তবে ১৯৭০, ৮০ ও ৯০-এর দশকে, যখন শহরের জনসংখ্যা বর্তমানের চেয়ে কম ছিল, তখনও খুনের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।
উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯০ সালে ৪৯৮টি, ১৯৯১ সালে ৫০৯টি এবং ১৯৯২ সালে ৪৬০টি খুনের ঘটনা ঘটেছিল।
ট্রাম্পের আরেকটি দাবি ছিল, ওয়াশিংটন ডিসি-তে খুনের হার বোগোটা, কলম্বিয়া বা মেক্সিকো সিটির মতো শহরগুলোর চেয়েও বেশি। যদিও এটি আংশিকভাবে সত্য, তবে ট্রাম্প সম্পূর্ণ চিত্রটি তুলে ধরেননি।
এটা ঠিক যে, ওয়াশিংটন ডিসি-র খুনের হার অন্যান্য অনেক শহরের তুলনায় বেশি। তবে, এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অনেক শহরের তুলনায়ও এখানকার সহিংস অপরাধের হার বেশি।
এছাড়াও, ট্রাম্প ‘নগদ জামিন’ (Cashless bail)-এর বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন এবং একে অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যেসব স্থানে নগদ জামিন ব্যবস্থা নেই, সেসব স্থানে পরিস্থিতি খারাপ।
তবে, এই বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তথ্যে দেখা যায়, জামিন সংস্কার এবং অপরাধের হারের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।
ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিস-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জামিন সংস্কারের সঙ্গে অপরাধের হারের কোনো উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক নেই। গবেষণায় ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩টি শহরের অপরাধের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ২২টি শহরে জামিন সংস্কার করা হয়েছিল। কলাম্বিয়া ল স্কুলের অধ্যাপক কেলেন ফাঙ্ক বলেছেন, “আমি এমন কোনো নির্ভরযোগ্য গবেষণা দেখিনি, যা প্রেসিডেন্টের এই দাবির সত্যতা প্রমাণ করে। আমার পেশাগত বিচারে, আমি এই দাবিকে মিথ্যা এবং উত্তেজনাপূর্ণ বলব।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস