সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) ছড়িয়ে পড়া একটি ভুয়া খবর কিভাবে মুহূর্তেই অস্থির করে তুলেছিল বিশ্ব শেয়ার বাজারকে, সেই চাঞ্চল্যকর ঘটনা সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
ঘটনাটি ছিল, মার্কিন শুল্ক হ্রাসের গুজবকে কেন্দ্র করে। এই ভুয়া খবরের জেরে বাজারে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা বুঝিয়ে দেয় আধুনিক যুগে তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে তা গ্রহণ করলে কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
ঘটনার সূত্রপাত হয়, যখন এক্সে “হ্যামার ক্যাপিটাল” নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে খবর ছড়ানো হয় যে, ট্রাম্প প্রশাসন ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করার কথা বিবেচনা করছে।
যদিও এই তথ্যের কোনো নির্ভরযোগ্য ভিত্তি ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, খবরটি এসেছিল একটি ভুল ব্যাখ্যা থেকে। ফক্স নিউজে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হাসেটের একটি সাক্ষাৎকারের ভুল ব্যাখ্যা করে এই গুজব ছড়ানো হয়।
হাসেটকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কি ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করার কথা বিবেচনা করবেন? উত্তরে তিনি সরাসরি হ্যাঁ বা না কিছুই বলেননি, বরং বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে বলে জানান।
কিন্তু এই সামান্য সূত্র ধরেই দ্রুত গুজব ছড়িয়ে পরে। বাজারের গতিবিধি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেয়ার বাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়।
বিনিয়োগকারীরা দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন। কারণ, শুল্ক কমানোর সম্ভাবনা দেখা দিলে সাধারণত ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হন এবং শেয়ারের দাম বাড়ে।
এই পরিস্থিতিতে, “ওয়াল্টার ব্লুমবার্গ” নামের একটি অ্যাকাউন্ট, যা ব্লুমবার্গ নিউজ সার্ভিসের নাম ব্যবহার করে, সেই গুজবটিকে আরও বেশি ছড়িয়ে দেয়। তাদের লক্ষাধিক ফলোয়ার থাকায় খবরটি দ্রুত আরও অনেকের কাছে পৌঁছে যায়।
অবশেষে, যখন হোয়াইট হাউস এই গুজবের সত্যতা অস্বীকার করে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। শেয়ার বাজার নিমেষেই তার আগের অবস্থানে ফিরে আসে।
যারা এই গুজবের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করেছিলেন, তাদের অনেকেরই লোকসান হয়। পরবর্তীতে, রয়টার্স তাদের ভুল স্বীকার করে এবং এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয়।
এই ঘটনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে দ্রুততার সঙ্গে তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পরে, কিন্তু নির্ভরযোগ্যতা সবসময় নিশ্চিত করা যায় না।
এই ধরনের ঘটনা, বিশেষ করে যখন তা আর্থিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত, তখন তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, কোনো খবর শেয়ার করার আগে, তার সত্যতা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষ করে, বর্তমান ডিজিটাল যুগে, যেখানে ভুয়া খবর দ্রুত ছড়িয়ে পরে, সেখানে সচেতনতা এবং সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য। এই ঘটনার মাধ্যমে, নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্ব আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন