বাবা যখন স্মৃতি হারান: সন্তানদের জন্য এক গভীর বেদনা!

অস্ট্রেলিয়ার এক ৪১ বছর বয়সী ব্যক্তি, ফ্র্যাজার, অল্প বয়সে আলঝাইমার রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এই রোগটি সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা গেলেও, ফ্র্যাজারের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে।

সম্প্রতি, তিনি নিজের ইউটিউব চ্যানেল “আই (ডন্ট) হ্যাভ ডিমেনশিয়া”-এর মাধ্যমে এই রোগের সঙ্গে তাঁর লড়াইয়ের কথা সকলের সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁর এই অভিজ্ঞতা অনেকের কাছেই অজানা এবং গভীর উদ্বেগের কারণ।

ফ্র্যাজার জানিয়েছেন, রোগ শনাক্ত হওয়ার প্রায় আড়াই বছর আগে থেকেই তাঁর মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তিনি স্মৃতি ভ্রমের শিকার হতেন, যা তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জন্য ছিল অত্যন্ত কষ্টকর।

একবার তিনি তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে একটি সিনেমা দেখতে বসেন, কিন্তু সিনেমাটি শেষ হওয়ার পর তাঁর মনেই ছিল না যে তিনি আগে এটি দেখেছেন। ফ্র্যাজারের ভাষায়, “পুরো সিনেমাটা দেখলাম, কিন্তু শেষটা আমার কাছে এখনো সম্পূর্ণ নতুন ছিল।”

তাঁর কিশোরী মেয়েরাও বাবার এই পরিবর্তনগুলি লক্ষ্য করতে শুরু করে। একদিন, তাঁর এক মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা জানালে, ফ্র্যাজার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং মেয়েকে খুঁজতে শুরু করেন।

তিনি বলেন, “সারারাত ধরে আমি মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম।”

ফ্র্যাজারের মেয়েরা তাঁকে জানিয়েছিল যে, তাঁদের মনে আছে বাবা মাঝেমধ্যে সবকিছু ভুলে যান। ফ্র্যাজার বলেন, “আমার ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারছিল যে আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি জিনিস ভুলতে শুরু করেছি।”

বর্তমানে, তিনি একটি ডায়েরিতে সবকিছু লিখে রাখেন, কারণ দিনের পরিকল্পনাগুলোও তাঁর মনে রাখতে সমস্যা হয়। এমনকি কোনো পরিকল্পনা পরিবর্তন হলে, তিনি আগের পরিকল্পনাটাই মনে রাখতে পারেন।

আলঝাইমার একটি স্নায়ু-সংক্রান্ত রোগ, যা সাধারণত বয়স্কদের স্মৃতি এবং চিন্তাভাবনার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। জন হপকিন্স মেডিসিনের মতে, এই রোগের চিকিৎসা রয়েছে, যা রোগের অগ্রগতিকে ধীর করতে সাহায্য করে।

তবে ফ্র্যাজারের মতো অল্প বয়সে এই রোগ হওয়ার কারণ এখনো অজানা।

ফ্র্যাজার আরও জানান, রোগের কারণে তাঁর আচরণে পরিবর্তন আসে। তিনি কখনো খুব আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েন, আবার কখনো তাঁর কথার খেলাপ হয়। তিনি বলেন, “এই রোগে আক্রান্ত হলে নিজের পরিচয়টাই বদলে যায়।”

এমনকি তিনি এমনও অনুভব করেন যে তিনি যেন ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করছেন।

তবে ফ্র্যাজারের জন্য সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো, তাঁর সন্তানদের ওপর এই রোগের প্রভাব। তিনি বলেন, “আমার সন্তানদের অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে হচ্ছে। একজন বাবা হিসেবে, যিনি সবসময় তাঁর সন্তানদের পাশে থাকার কথা, তিনিই এখন তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।”

তিনি আরও যোগ করেন, “এই বিষয়টা আমাকে অপরাধী করে তোলে, যদিও এতে আমার কোনো দোষ নেই।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলঝাইমার একটি জটিল রোগ, যা মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। ফ্র্যাজারের এই অভিজ্ঞতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া কতটা জরুরি।

এই নিবন্ধটি তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে এবং কোনো চিকিৎসা পরামর্শ হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *