বাবাকে একনজরে দেখতে বিদেশ পাড়ি, বাবার সঙ্গে ছেলের মিল দেখে চোখ জুড়ালো!

ঐতিহাসিক এক পুনর্মিলন: বাবার সঙ্গে ৩২ বছর পর ছেলের সাক্ষাৎ, যা ছুঁয়ে গেল সকলের মন।

সান্তো ডমিঙ্গোর বিমানবন্দরে তখন স্বাভাবিক কোলাহল। কিন্তু মোইজেসের (Moises) কাছে, জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া একটি মুহূর্তের সাক্ষী হতে গিয়ে যেন সব শব্দ ফিকে হয়ে আসছিল।

৩২ বছর বয়সী মোইজেস, প্রথমবারের মতো তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। বাবার সঙ্গে তাঁর এই সাক্ষাৎ ছিল এক অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত, যা গোপনে সাজানো হয়েছিল এবং মোইজেসের বান্ধবী শায়েন (Cheyenne) তা টিকটকে ধারণ করে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেন।

ছোটবেলায় মোইজেসের বাবা দেশ থেকে চলে গিয়েছিলেন, সম্ভবত নির্বাসনে। এর ফলে বাবার স্মৃতিগুলো অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছিল।

মায়ের কাছে বাবার কথা শুনতেন, হয়তো দু-একবার ফোনে কথাও বলেছিলেন। কিন্তু সেসব তেমন মনে নেই মোইজেসের।

মোইজেস জানান, “আমার যখন ১৮ বছর বয়স, তখন বাবা ফেসবুকে বন্ধুত্বের জন্য অনুরোধ পাঠান।

এরপর মাঝে মাঝে আমাদের কথা হতো। তবে পর্দার আড়ালে থাকা কারও সঙ্গে কথা বলে তখন সম্পর্কটা গভীর মনে হয়নি তাঁর।

মোইজেস বলেন, “আমি আসলে চিনতাম না এই মানুষটাকে। তাই খুব বেশি কথা হতো না। যখন সরাসরি দেখা হলো, তখন আমরা জীবনের গল্প ভাগ করে নিলাম, যেন নতুন করে সবকিছু শুরু হলো।

বাবাকে অবশেষে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে আরও একটি কারণ ছিল।

মোইজেস এখন দুই মেয়ের বাবা। মোইজেস বলেন, “আমি এখন বাবা হয়েছি, আর বাবাও তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হতে চেয়েছিলেন।

তাই সুযোগটা আসতেই আমি রাজি হয়ে যাই।

এই আবেগপূর্ণ সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত হতে মোইজেস শায়েনের সমর্থন চেয়েছিলে।

“আমি সহজে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি না, তাই সবসময় মনের ভেতরে চেপে রাখি। শায়েন সবসময় আমার পাশে ছিল, তাই এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে আমার সুবিধা হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া টিকটকের ভিডিওতে শায়েন মোইজেসের আবেগ প্রত্যক্ষ করেছেন।

তিনি বলেন, “আমি দেখেছি, সেখানে উপস্থিত সবাই বাবাকে ভালোবাসে, কারণ তাঁরা বাবার ছবি দেখেছে, মায়ের কাছ থেকে তাঁর গল্প শুনেছে।

মোইজেসের জন্য এটা ছিল বিশাল এক আবেগ, কারণ সে তো কাউকেই সেভাবে চিনত না।

এই পুনর্মিলন ছিল নানা চমকে ভরা।

মোইজেস প্রথমবার তাঁর বাবার কণ্ঠস্বর শোনেন।

তিনি বলেন, “বাবা হাইতিতে জন্মেছেন, তবে বড় হয়েছেন ব্রুকলিনে, তাই তাঁর গলায় ব্রুকলিনের টান ছিল। আমি তো শুনে অবাক!”

মোইজেস আরও যোগ করেন, “আমাদের শারীরিক গঠনে অনেক মিল রয়েছে।

আমার ছোট আরও দুই ভাই আছে, যাদের আমি আগে কখনো দেখিনি। বিষয়টি খুবই ভালো লেগেছে।

বাবা এবং ছেলের মধ্যেকার কথোপকথনে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

মোইজেস জানান, “আমরা দুজনেই পিয়ানো বাজাতে পছন্দ করি।

বাবার বই পড়ার অভ্যাস আছে, আমারও তাই। এমনকি, বাবা একসময় ভালো বক্সার ছিলেন, আমিও বক্সিং করি।

অথচ আমরা জানতাম না যে আমাদের মধ্যে এত মিল রয়েছে।

শায়েনের মতে, টিকটকে এই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল, যাঁরা তাঁদের বাবা-মাকে দেখেননি, তাঁদের কাছে এই গল্প পৌঁছে দেওয়া।

তিনি বলেন, “এই ভিডিও দেখে অনেকে আশা খুঁজে পেয়েছেন, বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।

এই পুনর্মিলন মোইজেসের জীবনকে নতুনভাবে সাজিয়েছে।

তিনি এখন নিজেকে আরও বেশি দৃঢ় মনে করেন।

মোইজেস বলেন, “আমি হয়তো জানতাম না যে আমার এটা দরকার ছিল, কিন্তু এখন আমি খুবই খুশি যে আমি এটা করতে পেরেছি।

ভবিষ্যতে এই পরিবারের বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।

মোইজেস জানান, “আমরা এখন প্রায় প্রতিদিনই ভিডিও কলে কথা বলি।

বাবা আমার মেয়েদের সঙ্গেও সময় কাটান।

আমরা অন্যান্য অনুষ্ঠানে একসঙ্গে হওয়ার পরিকল্পনা করছি।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *