মহাকাশে সেলিব্রেটিদের উড্ডয়ন: ধনী ও গরিবের মধ্যে বাড়ছে বিভাজন?
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে একটি বিশেষ মহাকাশ অভিযানে যান কয়েকজন সেলিব্রেটি নারী। এই ঘটনার পরেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
নীল অরিজিন নামক একটি কোম্পানির তৈরি করা রকেটে চড়ে এই মহাকাশ ভ্রমণে অংশ নেন পপ তারকা কেটি পেরি, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব গেইল কিং এবং অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের বাগদত্তা লরেন সানচেজসহ আরও কয়েকজন। তাদের এই যাত্রা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা অনেকের দৃষ্টিতে ছিল এক ধরনের “লোক দেখানো” বিষয়।
এই ঘটনার পেছনের কারণগুলো নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, সমাজের এই প্রভাবশালী নারীরা কি সত্যিই নারীর ক্ষমতায়নে সহায়তা করছেন, নাকি এটি কেবলই একটি প্রচারণার অংশ? সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের বিলাসবহুল আয়োজন, যেখানে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে কোনো মিল নেই, তা সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যে বিদ্যমান গভীর বিভাজনকে আরও প্রকট করে তোলে।
এই মহাকাশ ভ্রমণের আয়োজনকারী কোম্পানি নীল অরিজিন-এর মালিক জেফ বেজোস। তিনি বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে প্রায়শই কথা বলেন। তবে, তার কোম্পানি এবং অ্যামাজনের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে পরিবেশের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, সে বিষয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
যেমন, অ্যামাজনের বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক প্যাকেজিং ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন সমাজের একটি বড় অংশ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে, খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী, তখন কোটি কোটি ডলার খরচ করে এই ধরনের মহাকাশ ভ্রমণ কতটা যৌক্তিক? তাদের মতে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ যদি পৃথিবীর মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হতো, তবে হয়তো অনেক মানুষের জীবনমান উন্নত করা যেত।
অন্যদিকে, এই ঘটনার সমালোচকরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। তাদের মতে, এই ধরনের আয়োজন একদিকে যেমন সমাজের ধনী শ্রেণীর বিলাসিতা প্রকাশ করে, তেমনিভাবে এটি “ভুয়া নারীবাদ”-এর একটি উদাহরণ।
অর্থাৎ, নারীদের ক্ষমতায়নের নামে এমন কিছু করা হচ্ছে, যা আদতে সমাজের বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, অনেকেই মনে করছেন, সমাজের প্রভাবশালী নারীদের উচিত তাদের সম্পদ ও ক্ষমতা ব্যবহার করে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করা। তাদের উচিত এমন পদক্ষেপ নেওয়া, যা প্রকৃত অর্থে নারীদের ক্ষমতায়ন করবে এবং একটি ন্যায়সংগত সমাজ গঠনে সহায়তা করবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অবলম্বনে।