যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের একজন বিচারককে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) গ্রেফতার করেছে। বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অভিবাসন কর্মকর্তাদের একটি মামলার আসামীকে ধরতে বাধা দিয়েছেন।
শুক্রবার সকালে মিলওয়াকির আদালতে বিচারক হানাহ ডুগানকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, বিচারক ডুগান আদালতে অবস্থান করা একজন ব্যক্তিকে অভিবাসন কর্মকর্তাদের হাত থেকে পালাতে সহায়তা করেছেন। এফবিআই-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে নিযুক্ত এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, বিচারক ডুগান ইচ্ছাকৃতভাবে ফেডারেল এজেন্টদের ভুল পথে চালিত করেছেন, যার ফলে ওই ব্যক্তি গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হন।”
ডুগানকে আটকের পর তার আইনজীবী ক্রেইগ মাস্টানতুওনো বলেছেন, “বিচারক ডুগান তার গ্রেপ্তারকে আন্তরিকভাবে প্রত্যাখ্যান করছেন। জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে এটি করা হয়নি।”
আদালত প্রাঙ্গণে ডুগানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা “বিচারককে মুক্তি দাও” বলে শ্লোগান দেয়।
এদিকে, ডুগানের আইনজীবী এক বিবৃতিতে বলেছেন, “হানাহ সি. ডুগান একজন আইনজীবী এবং বিচারক হিসেবে পুরো কর্মজীবনে আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচারের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “বিচারক ডুগান দৃঢ়ভাবে তার আত্মপক্ষ সমর্থন করবেন এবং নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বিচারকের একটি ছবি শেয়ার করেছেন, যেখানে ডুগানকে মাস্ক পরে বিচারকের আসনে বসতে দেখা যাচ্ছে এবং তার পরনে ইউক্রেনের জাতীয় প্রতীক ছিল।
উইসকনসিনের গভর্নর ডেমোক্র্যাট টনি এভার্স এক বিবৃতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, তারা “আদালতকে দুর্বল করতে বিপজ্জনক শব্দ ব্যবহার করছে।”
এই ঘটনার জেরে ডেমোক্র্যাট সিনেটর ট্যামি বাল্ডউইন বলেছেন, একজন বিচারকের গ্রেপ্তার “গুরুতর এবং কঠোর পদক্ষেপ”। তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশে রাজা নেই এবং আমরা এমন একটি গণতন্ত্রে বাস করি যেখানে সবাই আইন মেনে চলতে বাধ্য।”
অন্যদিকে, রিপাবলিকান সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো “ক্ষমতার অপব্যবহার”। তিনি বলেন, “এটা পরিষ্কার যে মিলওয়াকিতে বিচারক ডুগানকে গ্রেপ্তার করার সঙ্গে অভিবাসনের কোনো সম্পর্ক নেই। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো দেশকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাওয়া।”
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং ক্ষমতার বিভাজন নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি পদক্ষেপ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান