ঘরের আরামেই! জরায়ু ক্যান্সার পরীক্ষার নতুন দিগন্ত

শিরোনাম: ঘরে বসেই জরায়ু ক্যান্সার পরীক্ষার অনুমোদন: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পদক্ষেপ, বাংলাদেশের জন্য এর গুরুত্ব

যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। দেশটির খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) সম্প্রতি জরায়ু ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের জন্য বাড়িতে বসেই নমুনা সংগ্রহের একটি নতুন ডিভাইসের অনুমোদন দিয়েছে।

এই ডিভাইসটির নাম ‘টিল ওয়ান্ড’ এবং এর মাধ্যমে নারীরা ডাক্তারের কাছে না গিয়েও ঘরে বসেই এই পরীক্ষাটি করতে পারবেন।

সাধারণত, জরায়ু ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য ‘প্যাপ স্মিয়ার’ বা ‘সার্ভিকাল সাইটোলজি’ নামক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা নারীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন।

নতুন এই ‘টিল ওয়ান্ড’-এর মাধ্যমে নারীরা নিজেরাই যোনি থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে পারবেন, যা পরে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে।

এই পরীক্ষার মাধ্যমে হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি)-এর উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়, যা জরায়ু ক্যান্সারের প্রধান কারণ।

এই উদ্ভাবনটি নারীদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক হতে পারে। কারণ, অনেক নারীই ডাক্তারের কাছে যেতে অস্বস্তি বোধ করেন বা পরীক্ষার জন্য সময় বের করতে পারেন না।

‘টিল ওয়ান্ড’-এর মাধ্যমে ঘরে বসেই পরীক্ষা করার সুযোগ থাকায়, নারীরা সহজেই এই স্ক্রিনিং করাতে পারবেন এবং রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ সম্ভব হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘টিল হেলথ’ নামক একটি কোম্পানি এই ডিভাইসটি তৈরি করেছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের নির্ভুলতা প্রচলিত পদ্ধতির মতোই।

অর্থাৎ, ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বর্তমানে, এই কিটটি প্রেসক্রিপশন-এর মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে।

পরীক্ষার ফল পজিটিভ হলে, একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ জরায়ু ক্যান্সার স্ক্রিনিং-এর হার বাড়াতে সহায়ক হবে।

বিশেষ করে, যারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারেন না, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ।

বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চার জন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর মধ্যে একজন জরায়ু ক্যান্সার স্ক্রিনিং করান না।

এই নতুন পদ্ধতি তাদের জন্য আরও সহজ করে তুলবে।

এবার আসা যাক বাংলাদেশের প্রসঙ্গে।

আমাদের দেশে জরায়ু ক্যান্সার একটি গুরুতর সমস্যা।

সচেতনতার অভাবে অনেক নারী এই রোগ সম্পর্কে জানেন না এবং স্ক্রিনিং করাতেও আগ্রহী হন না।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে স্ক্রিনিং-এর ব্যবস্থা থাকলেও, তা সব অঞ্চলের নারীদের জন্য সহজলভ্য নয়।

যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত এই নতুন প্রযুক্তি সরাসরি বাংলাদেশে এখনই পাওয়া না গেলেও, এটি আমাদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়।

এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, কিভাবে নারীদের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা আরও সহজ ও অ্যাক্সেসযোগ্য করা যায়।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও যাতে নারীরা ঘরে বসে এই ধরনের পরীক্ষা করাতে পারেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করা যেতে পারে।

একইসঙ্গে, জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং-এর গুরুত্ব সম্পর্কে নারীদের জানানো প্রয়োজন।

চিকিৎসকদের মতে, জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হলো— এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়া এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং করানো।

তাই, প্রতিটি নারীর উচিত— তাঁদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *